তিন যুগ পর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবেন দুই বাংলাদেশি সাঁতারু
জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারের সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন সাবেক জাতীয় সাঁতারু নাজমুল হক হিমেল। তার সঙ্গে দেশের অন্যতম সেরা সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন জুলাইয়ে।
সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে হিমেল এই তথ্য দেওয়ার পর সব আকর্ষণ ইংলিশ চ্যানেল নিয়েই তৈরি হয়।
সারা বিশ্বের মধ্যে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতারুদের জন্য আলাদা একটি রোমাঞ্চ। এই চ্যানেল পাড়ি দেওয়া বিশেষ এক সম্মান ও মর্যাদার। বাংলাদেশির মধ্যে ব্রজেন দাস ও মোশাররফ হোসেন খান ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন।
আজ (২০ মে,মঙ্গলবার) অবশ্য আব্দুল মালেক নামে আরেক বাংলাদেশি সাঁতারুর নাম শোনা গেছে, তিনি স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছিলেন।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার জন্য স্লট পাওয়া দুষ্কর। জেলিফিস, ঠান্ডা পানি ও প্রাকৃতিক বৈরিতার পাশাপাশি ব্যয়ও অনেক। এরপরও পেশাদার ও সৌখিন সাঁতারুরা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে বিভক্ত করা ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের নেশায় মাতেন।
এবার সেই রোমাঞ্চকর অভিযানে যাচ্ছেন বাংলাদেশ দুই সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমুল হক হিমেল। আগামী ৭ জুলাই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে যুক্তরাজ্য যাবেন এই দুই সাঁতারু। সেখানে গিয়ে অন্তত ১০ দিন অনুশীলন করবেন দুজন।
এর আগে বাংলাদেশের তিন সাঁতারু ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমকারী প্রথম এশীয় ব্রজেন দাস। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে তিনি মোট ছয়বার চ্যানেলটি অতিক্রম করেন।
এই চ্যানেল সবচেয়ে কম সময়ে সাঁতরে পার হওয়ার রেকর্ডও গড়েছিলেন তখন।
এরপর ১৯৬৫ সালে আবদুল মালেক ও ১৯৮৭ সালে মোশাররফ হোসেন ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন।
গত দুই দশকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর। ২০১২ সালে লন্ডন ও ১৬ সালে রিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
কয়েক বছর ধরেই ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন অলিম্পিয়ান সাঁতারু সাগর। তিনি সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন হিমেলকে। যিনি বর্তমানে চীন প্রবাসী। সাঁতার অঙ্গনে অবশ্য তার খুব তারকাখ্যাতি ছিল না।
সাগর ও হিমেল রিলেতে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেবেন। তাদের দুই জনের সঙ্গী দুই ভারতীয় সাঁতারু ইলভিস আলী হাজারিকা ও রিমো সাহা। দুই ভারতীয় সাঁতারুর সঙ্গে রিলে করার কারণ সম্পর্কে সাগর বলেন,
‘ভারতীয় দুই সাঁতারুর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। রিলেতে তুলনামূলক ব্যয় কম।’
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে একজন সাঁতারুর প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন থেকেও তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের দুই সাঁতারু মূলত ২০২৮ সালের আগে ব্যক্তিগত কোনো স্লট পাচ্ছিলেন না। কলকাতার দুই সাঁতারুর সহযোগিতায় এই বছরে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সুযোগ মেলে তাদের।
যে কারণে চার সাঁতারু মিলে একটা রিলে করবেন ইংলিশ চ্যানেলে।
অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু সেসবের জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা জানালেন হিমেল,
‘ওখানে জেলি ফিশ আছে। পানির তাপমাত্রা সেখানে ১৫ থেকে ১৯ ডিগ্রি। তবে আমি চীনে ১৯ ডিগ্রিতে সাঁতার কেটেছি। খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তবে ১৫ ডিগ্রি হলে চ্যালেঞ্জিং থাকবে।’ ইংলিশ চ্যানেলের প্রস্তুতি সম্পর্কে কিশোরগঞ্জের এই সাঁতারু বলেন, ‘প্রায় ৩৭ বছর পর ব্রজেন দাস স্যার এবং মোশাররফ হোসেন স্যারের পর আমরা দুজন বাংলাদেশি যাচ্ছি। নিঃসন্দেহে এটা একটা ব্রেকথ্রু। যা গর্বের বিষয় এবং আশা করি এখন যে প্রজন্ম আছে তারাও আমাদের থেকে অনুপ্রেরণা পাক।’
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে সাঁতারুদের ৪০-৫০ কিলোমিটার সাঁতরাতে হয়। স্রোত ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে ১০-১৫ ঘণ্টাও লাগে। চারজনের রিলে হওয়ায় একেক জনের ৪ ঘণ্টার বেশি পানিতে থাকতে হবে।
সাগর ও হিমেলের ৩ ঘণ্টার মতো পানিতে টানা থাকার রেকর্ড রয়েছে।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার কিছু গাইডলাইন রয়েছে। সেটা ভঙ্গ হলে অকৃতকার্য হবেন সাঁতারুরা, ফলে রেজিস্ট্রেশন ফি ও অন্যান্য ব্যয় গচ্চাই যাবে, তেমনটা হলে পুনরায় আবার নতুন স্লটের জন্য আবেদন করতে হবে।
৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার ও ডাইভিং প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে আগামীকাল।
মিরপুর জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে চার দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, সুইমিং ক্লাব, বিকেএসপি নিয়ে মোট ৮০টি টিমের প্রায় ৫৫০ জন সাঁতারু অংশ নিচ্ছেন।
বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় বালক-বালিকা ৫টি গ্রুপে (অনূর্ধ্ব-১০, ১১-১২, ১৩-১৪, ১৫-১৭ ও ১৮-২০ যুবক-যুবতী) সাঁতারুরা অংশগ্রহণ করবে।
সাঁতারে ১০০টি ইভেন্ট ও ডাইভিংয়ে ৪টি ইভেন্টসহ (১ মি. স্প্রিং বোর্ড, ৩ মি. স্প্রিং বোর্ড, ৫ মি. প্লাটফর্ম ডাইভিং ও বালিকাদের ১ মি. স্প্রিং বোর্ড) মোট ১০৪টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সে ডাইভিং পুলে ডাইভিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
সারা দেশ থেকে প্রতিভাবান সাঁতারু খুঁজে বের করতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’। এবার প্রথমবারের মতো আন্তঃস্কুল সাঁতার প্রতিযোগিতাও শুরু করতে যাচ্ছে সুইমিং ফেডারেশন।
সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন জানিয়েছেন,
‘জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমরা আন্তঃস্কুল সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু করতে চাই। এটা প্রথম আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্ট। এখানে ইংলিশ মিডিয়াম ও বাংলা মিডিয়ামের ছেলে-মেয়েরা অংশগ্রহণ করবে। আমরা চাচ্ছি প্রতিটা বিভাগেই এই কার্যক্রম চালাতে। আমরা প্রথম শুরু করব ঢাকা দিয়ে। আশা করছি এখান থেকে অনেক ভালো সাঁতারু বের হয়ে আসবে। আমরা যদি এখান থেকে ভালো সাঁতারু পাই তাহলে তাদেরকেও আমরা ট্যালেন্ট হান্টের প্রোগ্রামে যুক্ত করে নেব। এ ছাড়া আগামীকাল আমাদের যে জাতীয় সাঁতার শুরু হচ্ছে এখানেও যারা ভালো করবে তাদেরকেও আমরা ট্যালেন্ট হান্টে নিয়ে যাব।’
বয়সভিত্তিক বিজয়ী সাঁতারুদের স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক প্রদান করা হবে। দলগত চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ দলকে দেওয়া হবে ট্রফি। এ ছাড়া সেরা সাঁতারু বালক ও বালিকাকে ব্যক্তিগত ট্রফি এবং আর্থিক পুরস্কার প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ভবনের অডিটোরিয়ামে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিযোগিতার বিস্তারিত জানান সুইমিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নিবেদিতা দাস ও নৌবাহিনীর কমান্ডার আলিমুল ইসলাম।