মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক-ক্ষোভ
অন্য সব ক্রীড়া ফেডারেশন ও সংস্থায় পুরোনো কমিটি ভেঙে নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করা হলেও একমাত্র বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়া সংস্থায় সেই পরিবর্তন আসেনি দীর্ঘদিন।
ক্রীড়াঙ্গনের বিশেষ কৌতুহল ছিল মহিলা ক্রীড়া সংস্থা নিয়ে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আজ ১৯ সদস্য মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি প্রকাশ করেছে।
এই নতুন কমিটি নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে চলছে সমালোচনা-বিতর্ক-ক্ষোভ।
দীর্ঘ সাড়ে আট বছর অ্যাডহক কমিটি দিয়ে পরিচালিত হওয়ার পর অবশেষে আজ ঘোষণা করা হয়েছে মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলামের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে নতুন কমিটির কথা জানানো হয়েছে।
১৯ সদস্যের এই নতুন অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ব্যারিস্টার সারওয়াত আলা হারদারকে। তাঁর পরিচয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘সিনিয়র আইনজীবী ও ক্রীড়ানুরাগী’।
মহিলা ক্রীড়া সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে অর্ধযুগের বেশি সময় কাজ করছেন ফিরোজা করিম নেলী। তাকেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে।
২০১৭ সালের ৩ মার্চ নিয়মবহির্ভূতভাবে সাত সদস্যের পরিবর্তে গঠিত ৩১ সদস্যের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ষাটের দশকের অ্যাথলেট হামিদা বেগম।
২০২২ সালের মার্চে তিনি মারা যান।
অসুস্থ থাকায় তাঁর মৃত্যুর আগে ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী ফিরোজা করিম ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
পুরোনো কমিটির সহসভাপতি এবং গত কিছুদিনে ভারপ্রাপ্ত সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করা ইসমত আরা হায়দারকে নতুন কমিটির সহসভাপতি করা হয়েছে।
সহসভাপতি পদে এসেছেন স্বাধীনতা পদক পাওয়া সাবেক অ্যাথলেট ফিরোজা খাতুন। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে সাবেক অ্যাথলেট শামীমা সাত্তার মিমুকে।
সদস্য হিসেবে আনা হয়েছে সাবেক ক্রিকেটার সালমা খাতুন, সাবেক সাঁতারু সবুরা খাতুন, সাবেক অ্যাথলেট ফৌজিয়া হুদা জুঁইয়ের মতো নতুন মুখ।
সদস্য তালিকায় আরও আছেন-
- মরিয়ম তারেক
- ফরিদা আক্তার বেগম
- শেহরিন আমিন
- নাসরিন আক্তার বেবি
- হাসনে আরা হাওয়া
- রওশন আরা বেগম
- মাহমুদা হক চৌধুরী
- এলিনা সিদ্দিকা
- আমরিন সাহজিয়া বশির এবং
- ক্রীড়া সাংবাদিক মৌসুমী আলম মৌ।
কমিটির সভাপতি করা হয়েছে সারওয়াত সিরাজ (শুক্লা)। তার পরিচিতি হিসেবে লেখা হয়েছে সিনিয়র আইনজীবী ও ক্রীড়ানুরাগী। অথচ ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট কেউই তাকে চেনেন না সেভাবে।
ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের জন্য ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সার্চ কমিটি গঠন করেছিল।
সেই সার্চ কমিটি বিভিন্ন ফেডারশেন/এসোসিয়েশনের অ্যাডহক কমিটির প্রস্তাবনা দিয়েছিল। সেই প্রস্তাবনা তালিকায় সভাপতি পদে ছিলেন সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা কামরুন নাহার ডানা।
কিন্তু তাঁকে সভাপতি করা হয়নি। ডানা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি নিয়ে সার্চ কমিটির আহ্বায়ক জোবায়েদুর রহমান রানা বলেন,
‘এই কমিটি আমাদের প্রস্তাবিত ছিল না। বিশেষ করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ আরো কয়েকটি পদে ব্যাপক রদবদল করেছে। স্পষ্টভাবে বলতে গেলে এই কমিটি আমাদের নয়। রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে যারা বিগত কমিটিতে এসেছিলেন। তাদের আমরা রাখিনি। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে আগের কমিটির সেক্রেটারি বহাল রয়েছেন।’
সার্চ কমিটির আরেক সদস্য মেজর ইমরোজ আহমেদ (অব) কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াগত ত্রুুটি নিয়ে বলেন,
‘ডিসেম্বর মাসে আমরা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি জমা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে মার্চ মাসে নগর ভবনে আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠন চূড়ান্ত হয়। সেই কমিটি সাত মাস পর প্রকাশ করল এবং সেখানে অনেক গড়মিল। শুটিং ফেডারেশনের কমিটিতেও একই কাজ হয়েছে।’
সার্চ কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য দুই জনই আফসোসের সুরে বলেন,
‘শুটিং ফেডারেশনের কমিটিতে আমরা কমনওয়েলথে স্বর্নপদকজয়ী শুটার আসিফ হোসেন খানকে রেখেছিলাম। প্রকাশিত তালিকায় তিনি বাদ পড়েছেন। মহিলা ক্রীড়া সংস্থায় কামরুন নাহার ডানা, জোবেরা রহমান লিনুর মতো ব্যক্তিত্ব নেই। এটা আসলে দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।’
ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও বিশিষ্ট সংগঠক কামরুন নাহার ডানা। তিনি মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
‘ক্রীড়াঙ্গনে অনেক নারী ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যারা সভাপতি হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখেন। অথচ আইন অঙ্গনের একজনকে এখানে আনা হয়েছে। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। উপদেষ্টার কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন গড়ার প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেছেন কিন্তু যারা রাজনৈতিক প্রভাবে এসেছিলেন তারা ঠিকই রয়ে গেলেন কিভাবে?’


