টাইব্রেকারে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের যুবাদের, চ্যাম্পিয়ন ভারত
রুদ্ধশ্বাস ও নাটকীয় এক ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরে যুব সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা হাতছাড়া করলো বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় ভারত, ফলে শিরোপা ঘরে তোলে তারা।
টাইব্রেকারের স্নায়ুযুদ্ধ কখন যে কাকে কাঁদায় বলা মুশকিল। পেনাল্টি শুটআউটে শুরুটা ভালোই করেছিল গোলাম রব্বানীর দল।
ভারতের দ্বিতীয় শুটার রোহেন সিংকে রুখে দেন ইসমাইল। তাতেই আশার তরী ভাসায় বাংলাদেশ।
কিন্তু শেষ দিকে সালাহ উদ্দিন ও অধিনায়ক নাজমুল হুদার ভুলে ডুবল বাংলাদেশের সেই তরী। আর বয়সভিত্তিক সাফে ভারত জিতে নেয় তাদের চতুর্থ ট্রফি।
আজ ফাইনালের প্রথম মিনিটেই ভারত ম্যাচে লিড নেয়।বাংলাদেশের গোলরক্ষক মাহিন পোস্ট থেকে একটু বেশি এগিয়ে ছিলেন।
ভারতের ফরোয়ার্ড এটি খেয়াল করে তার মাথার উপর দিয়ে শট নিলে মাহিন সেই ফ্লাইট মিস করে গোল হজম করেন।
প্রথমার্ধের শুরুতে গোল হজম করলেও ধীরে ধীরে বাংলাদেশ খেলা তৈরি করতে থাকে।
৪২ মিনিটে শ্রীলঙ্কার রেফারি মোহাম্মদ জাফরানের এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের নিশ্চিত গোল বাতিল হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে একের পর এক আক্রমণ চালায় বাংলাদেশ। ৬০ মিনিটে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরান বদলি হিসেবে নামা জয় আহমেদ।
ভারতের অরুণাচল প্রদেশের ইউপিয়ার গোল্ডেন জুবিলি স্টেডিয়ামে প্রথম মিনিটেই গোল হজম করে বাংলাদেশ। ডি-বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে লম্বা ফ্রি-কিক থেকে জাল কাঁপান ভারতের সিঙ্গামায়ুম শামি।
১৫ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে আরেকটি আক্রমণ শানায় ভারতের ওমাং ডোডাম, তাঁর গতির সঙ্গে কুলিয়ে ওঠেনি বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররাও।
শেষ পর্যন্ত গোলকিপার ইসমাইল হোসেনের বাধায় জালের নাগাল পাননি ডোডাম।
এর তিন মিনিট পরই স্বাগতিকেরা আরেকবার আক্রমণে গেলে তা লেফটব্যাক সানি দাস দারুণভাবে সামলেছেন।
প্রতিপক্ষের এমন আক্রমণ থামানোর পাশাপাশি সুযোগ খুঁজতে থাকে বাংলাদেশ।
২৫ মিনিটে একটা আশা জাগানিয়া আক্রমণও করে তাঁরা। বাঁ প্রান্ত ধরে এগিয়ে রক্ষণ ভাঙেন সুমন সরেন।
কিন্তু গোলমুখে ঢুকতেই খেই হারিয়ে ফেলে সরাসরি বল পাঠিয়ে দেন ভারতের গোলকিপার সুরজ সিংয়ের হাতে।
যদিও ফাঁকা জায়গায় থাকা নাজমুল হুদাকে পাস দিলে ভিন্ন কিছু হলেও হতে পারত। ২৮ মিনিটে নাজমুলের শট পোস্টের পাস দিয়েই চলে যায়।
এরপর ৩০ ও ৩১ মিনিটে ভারতের দুটি আক্রমণ বাংলাদেশের রক্ষণদেয়ালে আটকা পড়ে। ৩৩ মিনিটে কর্নারের বিনিময়ে বাংলাদেশের আক্রমণ প্রতিহত করে ভারত।
ম্যাচের সময় যত গড়ায় তত বাংলাদেশও নিজেদের গুছিয়ে নেয়। ৪২ মিনিটে মোরশেদ আলীর ক্রস থেকে হেড নেন মিঠু চৌধুরী।
কিন্তু তাঁর হেড পোস্ট থেকে ফিরে আসে, সেই বলে ফিরতি হেড নেন রিফাত কাজী। সেটা জালে জড়ালেও রেফারি জাফরান গোল দেননি।
ধারাভাষ্যকার অবশ্য বলেছেন দ্বিতীয় হেডের আগে রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজানোয় গোলটি হয়নি। অথচ ফাউলের মতো কোনো দৃশ্যই চোখে পড়েনি!
এমনকি প্রথমার্ধে ৪৫ মিনিটের সঙ্গে অতিরিক্ত আরও চার মিনিট দিলেও রেফারি খেলা চালু রাখেন আরও বেশি সময়। যা নিয়ে বাংলাদেশি সেন্টারব্যাক মিঠুকে একটু বিরক্তি প্রকাশ করতেই দেখা গেছে।
মালদ্বীপের সঙ্গে ড্র দিয়ে এবারের টুর্নামেন্ট শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। এরপর নেপালকে হারিয়ে উঠে ফাইনালে।
ছেলেদের বয়সভিত্তিক সাফে আজকের আগে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে একবার। সেটা গত বছর অনূর্ধ্ব-২০ সাফে নেপালকে হারিয়ে।
২০১৫ সালে প্রথম সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা।
যদিও প্রতি আসরে বয়সের একই মাপকাঠি থাকে না। প্রথমবার ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতে নেপাল।
পরের দুই আসর হয় অনূর্ধ্ব-১৮। যে দুবার ফাইনালে গেলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বাংলাদেশ।
২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-২০ সাফে ভারতের কাছে হেরে আবার শিরোপা হাতছাড়া করে যুবারা। আর ২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ।