আচমকা এক আক্রমণে আর্সেনালকে স্তব্ধ করে ফাইনালের পথে এগিয়ে পিএসজি
আর্সেনাল ০–১ পিএসজি
লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামের ৬০ হাজার দর্শকের আসন হয়তো তখনো সেভাবে গরম হয়নি। হয়তো তাঁরা কোনো কিছু বুঝেও উঠতে পারেননি। এর মধ্যেই আচমকা এক আক্রমণ থেকে গোল! উসমান দেম্বেলের একমাত্র গোলে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে আর্সেনালকে স্তব্ধ করে ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল পিএসজি।
ফুটবলবিষয়ক ইতিহাসবিদ ম্যাট বার্টজের মতে, ১৯৯৫ সালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি দুই দল মিলিয়ে সবচেয়ে তরুণ-নির্ভর সেমিফাইনাল।
এ ছাড়া এ নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫৮৩৮ দিন পর স্বাগতিকরা প্রথম সেমিফাইনাল খেলতে নামলো। যেখানে মাত্র চতুর্থ মিনিটেই আচমকা এক গোল দিয়ে স্বাগতিক শিবিরকে ভড়কে দেন উসমান দেম্বেলে।
এই গোল দেখতে নিশ্চয় প্রস্তুত ছিলেন না আর্সেনাল সমর্থকেরা। কারণ, জালটা যে কেঁপেছে আর্সেনালেরই। কাঁপিয়েছেন উসমান দেম্বেলে।
সেমিফাইনালের প্রথম লেগের চতুর্থ মিনিটে দেম্বেলের গোলের পর গোলপোস্টের নিচে বীরত্ব দেখিয়েছেন জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। আর্সেনালের পাঁচ–পাঁচটি গোলের সুযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপজয়ী দেম্বেলের গোল আর ইউরোজয়ী দোন্নারুম্মার অসাধারণ সেভগুলোই ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। তাতে আর্সেনালকে তাদেরই মাঠে ১–০ ব্যবধানে হারিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পথে এগিয়ে গেছে পিএসজি।
আগামী বুধবার নিজেদের মাঠ প্যারিসের পার্ক দে প্রিন্সেসে ফিরতি লেগে হার এড়ালেই পাঁচ বছর পর উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠবে পিএসজি।
রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্সেনাল যে দাপট দেখিয়েছিল, এর ছিটেফোঁটাও আজ দেখা যায়নি। বলের দখল, শট নেওয়া, পাস বাড়ানোর সংখ্যা, নিখুঁতভাবে বল বাড়ানো—সবকিছুতেই গানারদের চেয়ে এগিয়ে ছিল প্যারিসিয়ানরা।
জমাট রক্ষণভাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, মিকেল আরতেতার দলকে রুখতে সব রকম ‘হোম ওয়ার্ক’ করে এসেছে লুইস এনরিকের দল।
রিয়ালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে লক্ষ্যে ১১টি শট নিয়েছিল আর্সেনাল। আজ নিতে পেরেছে অর্ধেকেরও কম; ৫টি। সবই বৃথা গেছে দোন্নারুম্মা দেয়াল তুলে দাঁড়ানোয়।
দেম্বেলের জয়সূচক গোলের কৃতিত্বটা ‘জর্জিয়ান ম্যারাডোনা’ খিচা কাভারাস্কেইয়ার। বাঁ দিক থেকে আক্রমণে উঠে বক্সে ঢুকে পড়েন কাভারাস্কেইয়া। এরপর আর্সেনালের দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে খুঁজে নেন দেম্বেলেকে। ফরাসি এই ফরোয়ার্ড বল রিসিভ না করেই বাঁ পায়ে শট নেন। সেটাই আর্সেনাল গোলকিপার দাভিদ রায়াকে ফাঁকি দিয়ে আশ্রয় নেয় জালে।
১–০ স্কোরলাইন নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লাইমলাইটে ডেকলান রাইস। এবার অবশ্য ফ্রি কিক থেকে সরাসরি গোল করে নয়; গোল করিয়ে অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছিলেন।
রাইসের সেট পিস থেকে হেডে পিএসজির জালে বল পাঠিয়েছিলেন মিকেল মেরিনো। দল সমতা ফিরিয়েছে ভেবে এমিরেটস স্টেডিয়ামে তখন আনন্দের জোয়াড়।
কিন্তু সেমি–অটোমেটেড প্রযুক্তি যাচাই করে জানিয়ে দেয়, বলে হেড করার আগে মেরিনো অফসাইডে ছিলেন। ব্যস, গোল বাতিল। মুহূর্তেই স্বাগতিক দল ও দর্শকদের উদযাপন রূপ নেয় হতাশায়।
৫৫তম মিনিটে দারুণ আরেকটি সুযোগ এসেছিল আর্সেনালের সামনে। বাঁ প্রান্ত ধরে দৌড়ে বক্সে ঢুকে লেয়ান্ড্রো ট্রোসার্ড জোরালো শট নেন, কিন্তু হাতের স্পর্শে সেটিকে বাইরে পাঠান দোন্নারুম্মা।
প্রায় ৬৫ মিনিট পর্যন্ত এভাবে আক্রমণ শাণিয়ে পিএসজিকে তটস্থ করে রাখে লাল-সাদা জার্সিধারীরা।
এরপর উভয় দল আক্রমণ পাল্টা-আক্রমণ চালালেও গোলের দেখা পায়নি। ৮০ মিনিটের পর টানা দুটি আক্রমণ ব্যর্থ হয়ে যায় ফরাসি ক্লাবটির।
প্রথমে ব্র্যাডলি বারকোলা গোলরক্ষককে একা পেয়েও বাইরে মারেন। অপরটিতে গনসালো রামোসের শট বারে লাগে।
এ নিয়ে চলতি মৌসুমের ইউসিএলে চার ইংলিশ ক্লাবের সবকটিকেই হারাল পিএসজি। আর্সেনালের আগে তাদের কাছে হারের স্বাদ পেয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল ও অ্যাস্টন ভিলা।
ভিলাকে হারিয়ে এ নিয়ে গত ৬ ইউসিএলের মধ্যে চতুর্থবার সেমিতে উঠে মার্কিনিয়োস-ফ্যাবিয়ান রুইজরা।
বিপরীতে ওডেগার্ড-সাকাদের আর্সেনাল ২০০৯ সালের পর সেমিতে খেলতে নেমে প্রথম লেগে হোঁচট খেলো। নিজেদের ফিরে পেতে আগামী সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (৮ মে) দ্বিতীয় লেগে তারা নামবে পিএসজির মাঠে।