খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

রবিবার, ১৫ই জুন ২০২৫

অবশেষে ‘চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে দরকার মাত্র ৬৯ রান, হাতে ৮ উইকেট। এখান থেকে একটা দলই হারতে পারে, সেটা ‘চোকার’ দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে হারতে হারতে, ঠেকতে ঠেকতে বদলে গেছে এই দলটার রসায়ন। সিংহের মত গর্জে অবশেষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেল তারা।

আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে অবশেষে এই কথা বলার অধিকার পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

ফাইনালে চতুর্থ দিনে ৬৯ রানের প্রয়োজন মিটিয়ে টেস্টে প্রত্যাবর্তনের ৩৩ বছর পর এই সংস্করণে বিশ্বসেরা হলো দলটি।

ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ গল্প লিখেই টেস্টে বিশ্বসেরা হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া দলটি কী অবলীলায় ছুঁয়ে ফেলল ২৮২ রানের লক্ষ্য।

চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রান করে জেতা সহজ নয় টেস্ট ক্রিকেটে। ১৪৮ বছরের ইতিহাসে ২৮২ ও এর বেশি রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে জয়ের উদাহরণ ছিল মাত্র ৫০টি।

লর্ডসে তো মাত্র দুবারই কোনো দল চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ বা এর বেশি লক্ষ্য ছুঁয়ে জিতেছিল। সংখ্যাটাকে আজ তিন বানিয়ে ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকা।

দিনের শুরুতেই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে ব্যাটিং করা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকেই হারালেও তেমন কোনো সমস্যা হয়নি দলটির।

এইডেন মার্করাম নামের একজন তো ছিলেন অন্য পাশে। গতকালই অসাধারণ এক সেঞ্চুরি পেয়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার ফিরেছেন জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে।

ছয় মাসের মধ্যে প্রথমবার প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা মার্করাম ফিরেছেন ১৩৬ রান করে জশ হ্যাজলউডের বলে মিডউইকেটে ট্রাভিস হেডকে ক্যাচ দিয়ে। মার্করাম ফিরেছেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের অভিনন্দনের পিঠ চাপড়ানি নিতে নিতেই।

অবশেষে 'চোকার' দক্ষিণ আফ্রিকাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

বাভুমার সঙ্গে তাঁর ১৪৭ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলে অস্ট্রেলিয়াকে। ৬৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাভুমা আজ ফিরেছেন আর মাত্র ১ রান যোগ করেই।

হ্যামস্ট্রিংয়ের কারণে পুরো ইনিংসেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ানো প্রোটিয়া অধিনায়ক ফিরেছেন জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে।

দিনের খেলার তৃতীয় ওভারে অধিনায়কের বিদায়ে পর কারও কি ১৯৯২ সালের ব্রিজটাউন টেস্টের কথা মনে পড়েছে! বর্ণবাদী নীতির কারণে ২২ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ থাকার পর সেটিই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট।

প্রত্যাবর্তন টেস্টে পঞ্চম দিনটা ঐতিহাসিক এক জয়ের সুবাস নিয়েই শুরু করেছিল দলটি। এবারের মতো ৮ উইকেট হাতে নিয়েই শেষ দিনে ৭৯ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার।

২০১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা দলটি দিন শুরু করেছিল ১২২ রান নিয়ে। সেই দল কার্টলি অ্যামব্রোস ও কোর্টনি ওয়ালশের তোপে আর মাত্র ২৬ রান যোগ হতেই অলআউট হয়ে হারল ৫২ রানে।

চাপের মুখে ভেঙে পড়ার যে ‘খ্যাতি’ দক্ষিণ আফ্রিকার, সেটির শুরু তো সেই ম্যাচেই। এরপর বারবার বিশ্ব মঞ্চে শুধু সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ভেঙে পড়ার গল্পই লিখেছে দলটি। ব্যতিক্রমও অবশ্য ছিল।

১৯৯৮ সালে ঢাকায় মিনি বিশ্বকাপ নামে পরিচিত আইসিসি নকআউট ট্রফি (পোশাকি নাম উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ) জিতেছিল হান্সি ক্রনিয়ের দক্ষিণ আফ্রিকা।
বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হলেও সেটি তো আর বিশ্বকাপ ছিল না, যে টুর্নামেন্টের বর্তমান নাম আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।

অবশেষে 'চোকার' দক্ষিণ আফ্রিকাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নবিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

এরপর বৈশ্বিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে ১৪টি নকআউট ম্যাচে হারা দক্ষিণ আফ্রিকা তাই প্রথমবার ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হলো আজই। দরকারি মুহূর্তে ভেঙে পড়ার পুরোনো ইতিহাসকে ছুড়ে ফেলে মার্করামরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে।

কাইল ভেরেইনা জয়সূচক রানটি নিতেই উল্লাস মেতে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুম। খুশির কান্নাও কাঁদলেন কেউ কেউ। ক্রিকেটের চিরন্তন ‘আন্ডার এচিভাররা’ যে শেষ পর্যন্ত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

অস্ট্রেলিয়া: ২১২ ও ২০৭।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৩৮ ও ৮৩.৪ ওভারে ২৮২/৫ (মার্করাম ১৩৬, বাভুমা ৬৬, মুল্ডার ২৭, বেডিংহাম ২১*, স্টাবস ৮, রিকেলটন ৬, ভেরেইনা ৪*; স্টার্ক ৩/৬৬, কামিন্স ১/৫৯)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy