খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

শনিবার, ২৮শে জুন ২০২৫

কুন্দের আখেরি গোলে রিয়ালের সর্বনাশ, শিরোপা বার্সেলোনার

১১৬তম মিনিটের দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান গড়ে দিয়েছেন জুল কুন্দে

প্রথমার্ধে পেদ্রিদ দূরপাল্লার শোতে দিশেহারা রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে দুই গোল দিয়ে জয়ের আশা জাগাল লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা। কিছুটা ছন্দ হারিয়ে ফেলা হান্সি ফ্লিকের দল সমতা টানল শুরুতে, এরপর জুলস কুন্দের আখেরি গোলে নিশ্চিত করল চলতি মৌসুমে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) কোপা দেল রের ফাইনালে সেভিয়ায় রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলের সমতায় গড়ালে অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়ায়।

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে জুলস কুন্দের আখেরি গোলে বার্সার জয় নিশ্চিত হয়। এর আগে নির্ধারিত সময়ে বার্সেলোনার পক্ষে পেদ্রি ও ফেরান তোরেস গোল করেন। রিয়ালের পক্ষে গোল করেন এমবাপ্পে ও অরেলিয়েঁ চুয়ামেনি।

প্রতিযোগিতার রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের এটি ৩২তম শিরোপা। ২৪টির বেশি নেই আর কারো।

 

রেফারি-বিতর্কে আগুন জ্বলেছে আগেই। আগুনের ফুলকিও ছুটেছে দুই দল মুখোমুখি হওয়ার আগে। সেভিয়ার প্লাজা নুয়েভায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বার্সেলোনা সমর্থকদের।

রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের সঙ্গেও তাঁদের এক চোট হয়ে যাওয়ার গুঞ্জন বের হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বাকি ছিল শুধু মাঠের লড়াইয়ে আগুন ধরার অপেক্ষা।

প্রথমার্ধের ২৮ মিনিটে সেই আগুন জ্বাললেন পেদ্রি, বিরতির পর ৭০ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে, ৭৭ মিনিটে অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও ৮৪ মিনিটে ফেরান তোরেস।

নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে কোপা দেল রে ফাইনাল অমীমাংসিত।

অতিরিক্ত সময়ে সবাই যখন পেনাল্টি শুটআউটের প্রহর গুনছিলেন ঠিক তখনই শেষ মোচড় আসে। ১১৬ মিনিটে বার্সা ডিফেন্ডার জুলস কুন্দের ম্যাচের নিষ্পত্তিসূচক গোল, কিন্তু সেটাও শেষ মোচড় নয়।

এ লড়াই তো শুধু ফাইনাল নয়, এল ক্লাসিকোও! থ্রিলারের সঙ্গে বিতর্কও না হলে কী হয়!

লুকা মদরিচের ঢিলেঢালা পাসের সুযোগ নিয়ে ডান পায়ের বুলেট গতির শটে গোল করেন কুন্দে। ৩-২ গোলে এগিয়ে শেষ পর্যন্ত জিতেছে বার্সাই। তবে ঘটনার এখানেই শেষ নয়।

কুন্দের গোলের পরই যে রিয়ালের লাল কার্ড দেখার শুরু!

শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দেড়েক আগে (১২৩ মিনিট) এমবাপ্পে ফ্রি কিক না পাওয়ায় বেঞ্চ থেকে রেফারির প্রতি তেড়ে যাচ্ছিলেন রিয়াল ডিফেন্ডার আন্তনিও রুডিগার। সতীর্থরা তাঁকে টেনে ধরে থামান।

এরপর রিয়াল বেঞ্চ থেকে কিছু একটা ছুঁড়ে মারা হয় মাঠে রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়া প্রতি।

রুডিগার না অন্য কেউ ছুঁড়ে মেরেছেন তা পরিস্কার বোঝা যায়নি। তবে রুডিগারকে লাল কার্ড দেখানে বেনগোচেয়া কার্পণ্য করেননি। মিনিটখানেক পর লুকাস ভাসকেজকেও লাল কার্ড দেখান রেফারি।

মৌসুমের এই তৃতীয় ক্লাসিকোতেও পয়সা উসুল দর্শকদের। বিশেষ করে বার্সার সমর্থকদের। গত অক্টোবরে রিয়ালকে লিগে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপেও ৫-২ গোলে জিতেছে বার্সা।

অর্থাৎ, এ মৌসুমে তিনবার রিয়ালের মুখোমুখি হয়ে ১২ গোল করল বার্সা।

এর মধ্যে শেষ তিনটি গোল শুধু ৩২তম কোপা দেল রে জয়ের স্মারক নয়, রিয়ালের চোখে চোখ রেখে ঘুড়ে দাঁড়ানো কাকে বলে সেটা দেখিয়ে দেওয়াও।

প্রথমার্ধ দেখে মনে হয়েছে, এ মৌসুমে দুটি ক্লাসিকোতেই একপেশে হারের মতো স্কোরকার্ড দেখা যেতে পারে। এই অর্ধে রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়েছে রিয়াল। পরের অর্ধে সেটাই আবার কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দিচ্ছিল।

কুন্দের আখেরি গোলে রিয়ালের সর্বনাশ, শিরোপা বার্সেলোনার

দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর আগে বদলি নামা এমবাপ্পের ফ্রি কিক থেকে গোল সেই চাপেরই প্রতিফলন।

সাত মিনিট পরই কর্নার থেকে হেডে  চুয়ামেনির গোলে আনন্দে ভেসে যায় লা কার্তোহা স্টেডিয়ামের সাদা গ্যালারি। ২-১ গোলে এগিয়ে রিয়াল। আর সর্বোচ্চ মিনিট পনেরো, তারপরই পরম স্বস্তির এক জয়!

নাহ, এটা শুধু ফাইনাল নয়, ক্লাসিকোও; এই ম্যাচে গল্পে আরও মোচড় থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। ৮৪ মিনিটের মোচড়টির জন্ম ফেরান তোরেসের পায়ে। লামিনে ইয়ামালের দারুণ এক পাস থেকে ডান প্রান্ত দিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ফিনিশিংয়ে তোরেস গোল করার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে বার্সা সমর্থকদের গ্যালারি।

বার্সার বেঞ্চ থেকে খেলোয়াড়দেরও কেউ কেউ মাঠে ঢুকে কিংবা কেউ টাচলাইনে আনন্দে উদ্বেলিত। তখন জুড বেলিংহাম, আরদা গুলেরদের মুখে তাকানো যাচ্ছিল না।

কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, মৌসুমের পর মৌসুম প্রতিপক্ষকে দেখানো বেলিংহামদের নিজেদেরই ওষুধ কি না হজম করতে হচ্ছে, সেটাও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের কাছে!

কুন্দের আখেরি গোলে রিয়ালের সর্বনাশ, শিরোপা বার্সেলোনার

আরও কষ্টের ব্যাপার, দ্বিতীয়ার্ধে তা কড়ায়-গন্ডায় শোধ করতে করতে ম্যাচে ফিরে তারপর এগিয়েও গিয়েছিল রিয়াল।

তোরেসের গোলটি যদি রিয়াল সমর্থকদের বুকে পেড়েকের আঘাত হয়, তবে বিরতির পর যোগ করা সময়ের ৬ মিনিটে সেই আঘাতের কষ্ট তাদের ভুলে যাওয়ার কথা!

বক্সের বাঁ দিক থেকে বিপজ্জনকভাবে ঢুকে পড়া রাফিনিয়াকে বাধা দেন রিয়াল ডিফেন্ডার রাউল আসেনসিও, পড়ে যান বার্সার এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার, পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়া।

এই রেফারির সংবাদ সম্মেলনে বলা কথাগুলোর প্রেক্ষিতেই চটেছিল রিয়াল। বেনগোচেয়া তখন স্বাভাবিকভাবেই গ্যালারির সাদা অংশের চক্ষশূল।

কুন্দের আখেরি গোলে রিয়ালের সর্বনাশ, শিরোপা বার্সেলোনার

সেটা আরও বেড়েছে সম্ভবত ভিএআর পেনাল্টিটি বাতিল করায়। উল্টো পেনাল্টি আদায় করতে ইচ্ছে করে পড়ে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন রাফিনিয়া।

ম্যাচের সেরা গোলটি প্রথমার্ধের ২৮ মিনিটে, পেদ্রির। অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টরের মতো খেলার সুরটা গেঁথে তারপর নিজে শেষ করেছেন। ভিনিসিয়ুস বল হারানোর পর মাঝমাঠ থেকে ডান প্রান্তে লম্বা পাস দেন ইয়ামালকে।

বার্সা তারকা বল পায়ে এদিক-সেদিক করে একটু সময় নিয়েছেন পেদ্রির এগিয়ে আসার। বক্সের জটলা থেকে মাঝের ফাঁকা দৌড়ে আসা পেদ্রির সামনে পাস বাড়ান। ডান পায়ের চোখ ধাঁধানো শটে গোল!

পেদ্রির গোলে এগিয়ে বার্সা প্রথমার্ধ শেষ করার পরই কেউ কেউ হয়তো ভেবেছিলেন শিরোপার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে! কারণ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে যত ক্লাসিকো হয়েছে, প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকা দলই শেষ পর্যন্ত জিতেছে।

সেভিয়াতেও তাই হলো, ২০২১ সালের পর প্রথম কোপা দেল রে জিতল বার্সা। ১৯৯০ সালের পর এই কাপ প্রতিযোগিতার ফাইনালে রিয়ালের বিপক্ষে এটাই তাদের প্রথম জয়।

রিয়ালের আক্রমণে ধার বেড়েছে এমবাপ্পে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার পর। প্রথমার্ধে ৭টি শটের মধ্যে বার্সার পোস্টে একটি রাখতে পেরেছে রিয়াল।

কুন্দের আখেরি গোলে রিয়ালের সর্বনাশ, শিরোপা বার্সেলোনার

বিরতির পর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত শুধূ পোস্টেই সাতটি শট রেখেছে রিয়াল, যেটা বার্সা করেছে প্রথমার্ধে। পেদ্রির গোলের পর অফসাইডের কারণে একটি গোল বাতিলও হয় রিয়ালের।

দূর্ভাগ্য বার্সাকেও তাড়া করেছে। ৪৪ মিনিটে তাদের কর্নার সবাইকে ফাঁকি দিয়ে সরাসরি রিয়ালের পোস্টে লেগেছে!

কার্লো আনচেলত্তির দলের রক্ষণে ভোগার একটি কারণ হতে পারে ম্যাচের মাত্র ৮ মিনিটের মাথায় ডিফেন্ডার ফাঁরলা মেন্দির চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া। তাঁর বদলি নামা ফ্রান গার্সিয়া প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি।

স্প্যানিশ সুপার কোপা জিতলেও বার্সা কোচ হিসেবে এটা হান্সি ফ্লিকের প্রথম বড় শিরোপা জয়। অন্যদিকে আনচেলত্তির রিয়াল কোচ হিসেবে শিরোপা জয়ের সম্ভবত শেষ সুযোগ ছিল।

চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে আগেই বাদ পড়েছে রিয়াল। লা লিগায় তাদের সঙ্গে ৪ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে শীর্ষে ফ্লিকের বার্সা।

আনচেলত্তি মৌসুম শেষ করতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়!

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy