নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন রোনালদো!
ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়তে চেয়েছিলেন রোনালদো নাজারিও। যদিও সিবিএফের নির্বাচনী কাঠামো, প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।এবার ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন রোনালদো।
মূলত আঞ্চলিক ফেডারেশনগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন না পাওয়ায় সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালেন তিনি।
নির্বাচন না করার বার্তা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোনালদো নাজারিও লেখেন,
‘সিবিএফের আগামী নির্বাচনে আমি সভাপতি পদপ্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রত্যাহার করছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, এমন বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন যে (ব্রাজিলের) ফুটবল ভালো মানুষদের হাতেই আছে।’
শেষ কয়েক বছর ধরে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কঠিন সময় পার করছে। রোনালদো তাই নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন।
এর আগে গুঞ্জন ছিল যে, তিনি ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলাকে ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
তবে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করে রোনালদো বলেন,
‘আমি যখন ২৭টি আঞ্চলিক ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি, তখন ২৩টি ফেডারেশন আমাকে স্বাগত জানাতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা জানায় যে বর্তমান প্রশাসন নিয়ে তারা সন্তুষ্ট এবং পুনর্নির্বাচনকেই সমর্থন করছে।
আমি আমার প্রকল্প উপস্থাপন করতে পারিনি, আমার ধারণাগুলো তাদের জানাতে পারিনি, যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবে কথা বলারও সুযোগ পাইনি।’
ফেডারেশনগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট রয়েছে, এবং এটা স্পষ্ট যে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো সুযোগ নেই।
বেশিরভাগ রাজ্য নেতারা অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টকে সমর্থন করছেন, এটি তাদের অধিকার, এবং আমি সেটিকে সম্মান জানাই, যদিও আমার বিশ্বাস ভিন্ন।’
ব্রাজিলের সেরা ‘নম্বর নাইন’ বলা হয় কিংবদন্তি স্ট্রাইকার রোনালদো নাজারিওকে। খেলার পাট চুকিয়ে দু’বারের বিশ্বকাপজয়ী তারকা বর্তমানে লা লিগার ক্লাব রিয়াল ভায়োদালিদের মালিকানায় আছেন।
এর আগে স্বদেশি ক্লাব ক্রুজেইরোর–ও মালিক ছিলেন রোনালদো। এরই মাঝে গত ডিসেম্বরে দেশের ফুটবলের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
নির্বাচনী কাঠামো, প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা নিয়ে আঙুল তুলে সিবিএফ, ফিফা, লাতিন ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল, ব্রাজিলের প্রাদেশিক সংস্থা ও ক্লাবগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছিলেন রোনালদো। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে তিনি ফিফা ও কনমেবলের তত্ত্বাবধায়ক চেয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে তাকে কমপক্ষে চারটি করে আঞ্চলিক ফেডারেশন ও ক্লাবের সমর্থন পেতে হয়।
ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির এই নির্বাচন ২৭টি প্রদেশের ফেডারেশন, প্রাদেশিক জেলার সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়। যারা তিন স্তরের (মোট ৮১ পয়েন্ট) প্রতিযোগিতার হয়ে ভোট দেয়।
এর মধ্যে রয়েছে সিরি ‘এ’র ২০ ক্লাব (প্রথম স্তর) এবং সিরি ‘বি’র ২০ ক্লাব (দ্বিতীয় স্তর)। সিবিএফের বর্তমান সভাপতি এডনাল্দো রদ্রিগেজ আবারও ফেডারেশনের শীর্ষ পদে নির্বাচন করতে চান। এখনও বেশ সময় রয়েছে তার হাতে।
২০২৫ সালের মার্চ থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে সিবিএফের সভাপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিও তার–ই বানানো। রোনালদো সরে দাঁড়ানোয় তার জন্য পথ অনেকটা মসৃণ হয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, রোনালদোর অধীনে থাকা রিয়াল ভায়াদোলিদ ক্লাবও খুব ভালো নেই। লা লিগার নিচের সারিতে অবস্থান করছে দলটা এবং ইতোমধ্যে দুইজন কোচ বরখাস্ত করা হয়েছে। সমর্থকরা তাকে ক্লাব ছেড়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে।
রোনালদো নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি ক্লাব বিক্রি করতে চান, তবে এখনও উপযুক্ত প্রস্তাব পাননি যা তার শর্ত পূরণ করতে পারে।
অনেকের ধারণা ক্লাবের এমন দুরবস্থা তার সমর্থন না পাওয়ার পেছনের অন্যতম কারণ!