উড়তে থাকা রংপুরকে মাটিতে নামাল ধুকতে থাকা রাজশাহী
আসরের প্রথম ৮ ম্যাচে অপরাজিত রয়ে উড়তে থাকা রাইডার্সদের কাছে পাত্তাই পাচ্ছিলো না কেউ! অবশেষে তাদের জয়রথ থামালো দূর্বল খ্যাত দুর্বার রাজশাহী। রায়ান বার্লের ঘূর্ণিতে মাঝারি মানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়েই অবশেষে আটকে গেল রাইডার্সরা।
চট্টগ্রাম আসরের শেষ দিনে আজ দিনের প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ২৪ রানে হারিয়েছে দুর্বার রাজশাহী। নিজেদের ৯ম ম্যাচে এসে এবারের আসরে প্রথম হারের মুখ দেখল রংপুর। রাজশাহীর এই জয়ের ফলে জমে উঠল বিপিএলের প্লে-অফের লড়াই।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে দুর্বার রাজশাহীকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় রংপুর রাইডার্স। ব্যাট করতে নেমে সাব্বির হোসেনের ব্যাটে চড়ে ভালো শুরু পেয়েছে রাজশাহী। আরেক ওপেনার মোহাম্মদ হারিসও এগিয়েছেন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ১২ বলে ১৯ রান করে দলের ২৪ রানের মাথায় থেমেছেন হারিস।
পাওয়ারপ্লের বাকি সময়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন সাব্বির। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ফায়দা লুটেছেন পুরোপুরিভাবে। ৬ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৬২ রান তুলেছে রাজশাহী। পাওয়ারপ্লে শেষেই থেমেছেন সাব্বির। ১৯ বলে ৩৯ রান করে দলের ৭৬ রানের মাথাতে আউট হন সাব্বির হোসেন।
সাব্বিরের বিদায়ের পর গোল্ডেন ডাক মারেন রায়ান বার্ল। এরপর বিজয়ের সাথে ক্রিজে যোগ দেন ইয়াসির আলী চৌধুরী। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে তাণ্ডব শুরু করেন ইয়াসির। রংপুরের বোলারদের কচুকাটা করে এগিয়েছেন তিনি। একের পর এক বাউন্ডারিতে রান তুলেছেন দলের বোর্ডে।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ফিফটি ছুঁয়েছেন ইয়াসির। ৩২ বলে ৬০ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলে দলের ১৫২ রানের মাথায় আউট হন তিনি। ইয়াসিরের বিদায়ের পর যেন ধস নামে রাজশাহীর ইনিংসে। আকবর আলীর সাথে ভুল বোঝাবোঝিতে রান আউট হয়েছেন বিজয়। ৩১ বলে ৩৪ রান করে সাজঘরে ফিরে যান তিনি।
শেষ দিকে ভালো বল করেছে রংপুর। টপাটপ উইকেট তুলে নিয়ে চাপে ফেলে দেয় রাজশাহীকে। নির্ধারিত ২০ ওভারের খেলা শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৭০ রান তুলেছে দুর্বার রাজশাহী। শেষ ৫ ওভারে ২৭ রান তুলতে গিয়ে হারিয়েছে ৬ উইকেট!
রংপুর রাইডার্সের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আকিফ জাভেদ এবং খুশদিল শাহ।
জবাব দিতে নেমে শুরুটা জঘন্য হয়েছে রংপুর রাইডার্সের। প্রথম ওভারেই ওপেনার ইরফান শুক্কুরের উইকেট হারিয়েছে রংপুর। ২ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিয়েছেন ইরফান। আরেক ওপেনার স্টিভেন টেলরও বেশিক্ষণ টেকেননি। দলের ১৫ রানের মাথাতে ১০ বলে ৪ রান করে বিদায় নিয়েছেন টেলর। পরের বলেই আউট হয়েছেন চারে নামা ইফতিখার আহমেদ, মেরেছেন গোল্ডেন ডাক। মাত্র ১৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে প্রচন্ড চাপে পড়ে যায় রংপুর রাইডার্স।
চাপ থেকে দলকে উদ্ধার করার অভিযানে নামেন সাইফ হাসান। খুশদিল শাহকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে পরিস্থিতি সামাল দেন সাইফ। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে রংপুর তোলে ৩৭। খুশদিল শুরুটা ভালোভাবে করলেও উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি। ১৩ বলে ১৪ রান করে দলের ৫৫ রানের মাথাতে বিদায় নিয়েছেন খুশদিল।
সাইফ এগিয়েছেন সাবলীল ব্যাটিংয়ে। রাজশাহীর বোলারদের পাত্তা না দিয়ে ব্যাটিং করে এগিয়ে গিয়েছেন সাইফ। ছুটছিলেন ফিফটির দিকে। ফিফটির খুব কাছে চলে গেলেও শেষমেশ আর ফিফটিটা ছুঁতে পারেননি সাইফ। ২৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন সাইফ।
ক্রিজে টিকে ছিলেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। দারুণ কার্যকরী ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকেন সোহান। উইকেটের চারপাশে দারুণ সব শটে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। দলের জয়ের আশাও বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
সাইফের মত ফিফটি মিস করেছেন সোহানও। ২৬ বলে ৪১ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন অধিনায়ক, দলের বোর্ডে তখন ১২৬ রান। সেখানেই নিজেদের প্রথম হারটা যে প্রায় নিশ্চিত, তা বুঝতে রংপুরের খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।
শেষ দিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ব্যাটে লড়াই চালিয়ে গেছে রংপুর রাইডার্স। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ৩৪ রান। শেষের আগের ওভারে ১৪ বলে ২৩ রান করে আউট হয়েছেন সাইফউদ্দিন। শেষ ওভারে লাগত ২৬ রান। তাসকিন আহমেদের ইয়র্কারে বোল্ড হয়েছেন নাহিদ রানা। ১৪৬ রানে অলআউট হয়েছে রংপুর রাইডার্স। ২৪ রানের দারুণ এক জয় তুলে নেয় দুর্বার রাজশাহী।
রাজশাহীর হয়ে ৪ উইকেট শিকার করা জয়ের নায়ক রায়ান বার্ল পেয়েছেন ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ। ২টি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ এবং এসএম মেহেরাব। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন শফিউল ইসলাম এবং সাব্বির হোসেন।