খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর ২০২৪

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ : ইউরোপের রাজত্ব পুনরুদ্ধার রেয়ালের

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শনিবার রাতের ফাইনালে ২-০ গোলে জিতে পঞ্চদশবারের মতো এর শিরোপা জিতল রেয়াল। দানি কারভাহাল দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ভিনিসিউস জুনিয়র।

ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতাটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরনের পর ৯ বার ফাইনাল খেলে প্রতিবারই শিরোপায় চুমু আঁকল রেয়াল মাদ্রিদ। সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ডটি অনেক আগে থেকেই তাদের দখলে, সেটাই আরও ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেল তারা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাতবার জিতেছে এসি মিলান।

এদিনের শুরুটা অবশ্য রেয়ালের জন্য বেশ ভীতি জাগানিয়া ছিল। প্রথমার্ধে বল দখলে অনেক পিছিয়ে থাকলেও দুর্দান্ত সব আক্রমণে প্রতিপক্ষ শিবিরে কাঁপন ধরায় ডর্টমুন্ড। কিন্তু বিরতির পর সেই চাপ আর ধরে রাখতে পারেনি তারা। পুরো ম্যাচে গোলের জন্য তাদের ১২ শটের চারটি ছিল লক্ষ্যে; যেখানে বিরতির আগে দুটি লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেওয়া রেয়াল মোট ১৩ শট নিয়ে ছয়টি লক্ষ্যে রেখে বাজিমাত করে।

শিরোপার হাতছানিতে স্নায়ুচাপ তো থাকবেই, সঙ্গে বাড়তি সতর্কতা- দুইয়ে মিলিয়ে শুরুর বেশ কিছুটা সময় মাঝমাঠেই বল ঘোরাফেরা করে। দ্বাদশ মিনিটে গিয়ে গোলের জন্য প্রথম শট নিতে পারে রেয়াল, তবে বক্সের বাইরে থেকে ফেদে ভালভেরদের শট লক্ষ্যের ধারেকাছেও ছিল না।

দুই মিনিট পর রেয়ালের বক্সে ভীতি ছড়ান ইউলিয়ান ব্রান্ডট। তবে দারুণ পজিশন থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে হতাশ করেন জার্মান মিডফিল্ডার। ২১তম মিনিটে আরও বড় বাঁচা বেঁচে যায় মাদ্রিদের দলটি। সতীর্থের থ্রু বল ধরে গোলরক্ষক একা পেয়ে যান কারিম আদেইয়েমি, আগুয়ান থিবো কোর্তোয়াকে দারুণভাবে কাটানও তিনি; কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি শট নিতে।

পরের কয়েক মিনিটেও রেয়ালের ওপর ঝড় বইয়ে যায়। ২৩তম মিনিটে দুর্ভাগ্য বাধা হয়ে না দাঁড়ালে এগিয়ে যেত ১৯৯৭ সালের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু আরও একবার তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পোস্ট; নিকলাস ফুয়েলখুগের শট কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে লাগে পোস্টে।

চলতি আসরে এই নিয়ে ডর্টমুন্ডের মোট ১৩টি প্রচেষ্টা পোস্ট কিংবা ক্রসবারে বাধা পেল।

প্রতিপক্ষের মুহুর্মুহু আক্রমণ রুখতে ব্যতিব্যস্ত রেয়াল ২৮তম মিনিটে রক্ষা পায় কোর্তোয়ার নৈপুণ্যে। এবার পাল্টা-আক্রমণে আদেইয়েমির কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে ফেরান বেলজিয়ান গোলরক্ষক। ৪১তম মিনিটে মার্সেল সাবিৎজারের নিচু শটও ঝাঁপিয়ে ফেরান কোর্তোয়া।

প্রথমার্ধে রেয়ালের কোণঠাসা চিত্র পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট; তারা বল পায়ে রাখায় এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে ছিল একেবারেই বিবর্ণ, গোলের জন্য কোনোভাবে দুটি শট নিলেও একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি দলটি। সেখানে ডর্টমুন্ড তৈরি করে অনেক সুযোগ; গোলের জন্য তাদের আট শটের তিনটি ছিল লক্ষ্যে।

দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে লক্ষ্যে প্রথম শট রাখতে পারে রেয়াল। ডি-বক্সের বাঁ কোণা থেকে টনি ক্রুসের বাঁকানো ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক। আর ওই কর্নারে দানি কারভাহালের হেড ক্রসবারের একটু ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।

৫৭তম মিনিটে বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন কারভাহাল; কিন্তু নিয়ন্ত্রিত শট নিতে পারেননি তিনি। ফলে শটে তেমন গতি ছিল না, এক সতীর্থের পায়ে বাধা পাওয়ার পর বল গ্লাভসে জমান গোলরক্ষক।

৬৩তম মিনিটে আরেকটি নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট হয় ডর্টমুন্ডের। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের বাড়ানো ক্রসে জোরাল হেড করেন ফুয়েলখুগ, কিন্তু সোজাসুজি হওয়ায় ঠেকাতে তেমন বেগ পেতে হয়নি কোর্তোয়ার। খানিক পর ডানদিক থেকে অসাধারণ একটি ক্রস বাড়ান ভিনিসিউস। কিন্তু গোলমুখে লাফিয়েও বলে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি নিজের ছায়া হয়ে থাকা বেলিংহ্যাম।

রেয়ালের জার্সিতে শেষবারেরর মতো মাঠে নামা ক্রুস এবং পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞ কারভাহালের অবদানে ৭৪তম মিনিটে এগিয়ে যায় রেয়াল। পরপর দুটি কর্নার আদায় করে নেয় তারা। জার্মান গ্রেটের দ্বিতীয় কর্নারে দুর্দান্ত কোনাকুনি হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কারভাহালের দ্বিতীয় গোল এটি। প্রথমটি ২০১৫-১৬ মৌসুমে গ্রুপ পর্বে, শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে।

তিন মিনিট পর ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয় রেয়ালের। বেলিংহ্যামের নিচু শট প্রতিপক্ষের একজনের পায়ে লেগে পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৮০তম মিনিটে আবারও ক্রস-জাদু; বক্সের বাইরে থেকে তার বাঁকানো ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে ফেরান গোলরক্ষক।

পরের দু্ই মিনিটে আরও দুটি অসাধারণ সেভ করে ব্যবধান বাড়তে দেননি গ্রেগর কোবেল। কামাভিঙ্গার জোরাল শট ক্রসবার ঘেঁষে ভেতরে ঢোকার শেষ মুহূর্ত রুখে দেওয়ার পর নাচো ফের্নান্দেসের হেডও ঠেকান তিনি।

৮৩তম মিনিটে আর পারেননি কোবেল। অবশ্য এর দায় মোটেও তার নয়। নিজেদের সীমানায় খুব বাজে ভুল করে বসেন ডিফেন্ডার ইয়ান মাটসেন, তার ভুল পাস ধরে বেলিংহ্যাম বক্সে ফাঁকায় খুঁজে নেন ভিনিসিউসকে। এমন উপহার পেয়ে কোনো ভুল করেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড, নিখুঁত শটে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ব্যালন দ’র জয়ের লড়াইয়ে থাকা এই তারকা।

এর মিনিট দুয়েক পরই ক্রুসকে তুলে মদ্রিচকে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন আনচেলত্তি। রেয়ালের জার্সিতে শেষবারের মতো মাঠ ছেড়ে গেলেন গত ১০ বছরে দলটির অনেক সাফল্যের নায়ক, মাঝমাঠের নেতা হয়ে ওঠা টনি ক্রুস।

কিছুক্ষণ পর ডর্টমুন্ড একবার জালে বল পাঠিয়েছিল বটে, তবে সঙ্গে সঙ্গেই অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান। বাকি সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আর তেমন কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি এদিন তেরজিচের দল।

১১ বছর আগে এই মাঠেই অল জার্মান ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে হেরেছিল ডর্টমুন্ড। সেখানেই আরও একবার দ্বিতীয়বার ইউরোপ সেরার মুকুট পরার স্বপ্ন চূর্ণ হলো তাদের।

ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষকে ‘সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তেরজিচ। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েসেটাই যেন আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠিত করল আনচেলত্তি বাহিনী।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy