সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ-ভারতকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা
অবশেষে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ও ভারতকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে অবসান হলো দুই ঘণ্টার বেশি সময়ের টানটান উত্তেজনা। সাফের ফুটবলে এ রকম ঘটনা আর ঘটেনি৷
টাইব্রেকারে ১১-১১ গোলে সমতা হওয়ার পর টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী সাডেন ডেথ চলার কথা। কিন্তু তার বদলে আকস্মিক টস হয়, যেখানে ভারত জিতে। তবে বাংলাদেশ এতে আপত্তি জানিয়ে ফের খেলার কথা জানায়। তবে ভারত মাঠে নামতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে উভয় পক্ষকে সন্তুষ্ট করে যুগ্ম শিরোপা ঘোষণা করে সাফ। রাত সাড়ে দশটার পর পুরস্কার প্রদান মঞ্চে সাফ সেই জটিলতার নিরসন করে।
কমলাপুর স্টেডিয়ামে এর আগে ম্যাচের শুরুতেই লিড নেয় ভারত৷ ৮ মিনিটে রক্ষণ দুর্বলতা ও গোলরক্ষকের ভুলে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। ভারতীয় মিডফিল্ডার নিতু লিন্ডার থ্রুতে বাংলাদেশের দুই ডিফেন্ডারকে পেছনে ফেলে বল পান শিবানী দেবী৷ বাংলাদেশের গোলরক্ষক স্বর্ণা রানী বক্সের সামনে এসে বলের নাগাল পাননি৷ শিবানী বুদ্ধিদীপ্তভাবে প্লেসিংয়ে বল জালে পাঠান।
৮ মিনিট পর ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল ভারতের। বক্সের মধ্যে গোলদাতা শিবানী দেবী ভালো পজিশনে বল পান। তার নেওয়া ডান পায়ের শট পোস্টের সামান্য ওপর দিয়ে যায়৷ তাতে এ যাত্রায় রক্ষা পায় বাংলাদেশের মেয়েরা।
বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে৷ তবে সমতা আনার মতো সুযোগ সেভাবে তৈরি করতে পারেনি স্বাগতিক দল৷ ৩৫ মিনিটে স্বপ্না রাণীর দুজনকে কাটিয়ে শট নিলেও বাইরে দিয়ে যায় ৷ প্রথমার্ধে বাংলাদেশ তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো আক্রমণ করতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধ্বে বেশ কিছু আক্রমণ করেও যেন গোলের দেখা মিলছিল না। ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। ভারতের শিরোপা উদযাপনের অপেক্ষা। সেই মুহূর্তে সাগরিকা গোল করে বাংলাদেশকে ম্যাচ ফেরান। চার মিনিট ইনজুরি সময়ে গোল দেন তিনি। বক্সের আগে জটলায় পাওয়া বল কোনাকুনি শটে গোলপোস্টে ঢুকান।
পরে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও সমতা। সাডেন ডেথের পর রেফারি ও সহকারী রেফারি খানিকটা দ্বিধান্বিত ছিলেন। ম্যাচ কমিশনার শ্রীলঙ্কান ডি সিলভা ডিলান টাচলাইনের কাছাকাছি এসে রেফারিদের ডেকে টসের কথা বলেন। দুই দল টসে যায়। সেই টসে ভারত জেতে। তবে বাংলাদেশের প্রতিবাদের মুখে সেই সিদ্ধান্ত বদলে আবার সাডেন ডেথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত মানেনি ভারত।
ভারত মাঠ ছেড়ে চলে যায় ড্রেসিংরুমে। ম্যাচ কমিশনার জানান তাদের জন্য অপেক্ষা করা হবে ৩০ মিনিট। এরপর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তবে সিদ্ধান্ত আসে প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় পরে। অফিশিয়ালদের সিদ্ধান্তের সম্মান জানিয়ে এ পুরোটা সময় মাঠে অবস্থান করেছে পুরো বাংলাদেশ দল। দুই দলকে যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়। পুরস্কারের মঞ্চ সাজানো হলেও সেখানে আসেনি ভারতের পুরো দল। টসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘোষণার পর ভারতের খেলোয়াড়দের আচরণও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। গ্যালারির সমর্থদের উদ্দেশ্য করে ইঙ্গিতপূর্ণ উদযাপনে মেতেছিলেন তারা।
ম্যাচ কমিশনার ভারত দলকে মাঠে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন৷ তবে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে ভারত। অন্যদিকে বাংলাদেশের যুক্তি ম্যাচ কমিশনার বাইলজের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। টুর্নামেন্টে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন। তিনিও অপেক্ষা করেছেন সিদ্ধান্তের জন্য। পরে পুরস্কার বিতরণের মঞ্চেও উপস্থিত ছিলেন তিনি।
সাফের ফুটবলে এ রকম ঘটনা আর ঘটেনি৷ বাংলাদেশের ফুটবলে এমন ঘটনা ছিল। সেখানে দুই দল মিলে ২০ এর অধিক শট নিয়েছিল।