রেকর্ড গড়ে চার দিনেই জিতল নিউজিল্যান্ড
বেডিংহ্যাম দারুণ খেললেও দক্ষিণ আফ্রিকা লড়াই করতে পারল না জেমিসন-স্যান্টনারদের বোলিংয়ের সামনে।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে প্রত্যাশিতভাবেই বড় জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড। টেস্টের চতুর্থ দিনে তারা জিতে যায় ২৮১ রানে।
শেষ ইনিংসে ৫২৯ রানের লক্ষ্যে বুধবার প্রোটিয়ারা অলআউট হয় ২৪৭ রানে।
কিছুদিন আগে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ফিফটি করা বেডিংহ্যাম তার প্রতিভার ছাপ রাখেন এখানেও। ১৩ চার ও ৩ ছক্কায় তিনি খেলেন ৯৬ বলে ৮৭ রানের ইনিংস।
নিউ জিল্যান্ডের হয়ে জেমিসন শিকার করেন ৪ উইকেট, স্যান্টনার ৩টি।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪৮ টেস্টে ২৬ পরাজয়ের বিপরীতে নিউ জিল্যান্ডের মাত্র ষষ্ঠ জয় এটি।
ইনিংস ব্যবধানে জয়গুলির বাইরে রানের হিসেবে কিউইদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় এটি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয় তাদের এটিই।
প্রথম ইনিংসে ৩৪৯ রানের লিড নিয়ে ফলো-অন না করানো নিউ জিল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে দেয় আগের দিনের ৪ উইকেটে ১৭৯ রানেই। ৫২৯ রানের লক্ষ্য তো দক্ষিণ আফ্রিকার ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিল। দেখার ছিল, কতটা লড়াই তারা করতে পারে।
উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য সহায়ক ছিল যথেষ্টই। তবে মেঘলা আকাশের নিচে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারে শুরুতেই ছোবল দেন কিউই পেসাররা। অধিনায়ক টিম সাউদি বোল্ড করেন দেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক নিল ব্রান্ডকে। ম্যাট হেনরি বিদায় করেন এডওয়ার্ড মুরকে। ৫ রানেই দুই ওপেনারকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
তৃতীয় উইকেটে রেনার্ড ফন টন্ডার ও জুবাইর হামজার দৃঢ়তায় লাঞ্চের আগে আর কোনো উইকেট হারায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। বিরতির পর দুজনকেই অল্প সময়ের মধ্যে ফেরান জেমিসন। ৮৩ বলে ৩১ করেন অভিষিক্ত ফন টন্ডার, ৯৬ বলে ৩৬ হামজা।
এরপর ম্যাচের একমাত্র শতরানের জুটি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বেডিংহ্যাম ও কিগান পিটারসেন যোগ করেন ১০৫ রান। সেই জুটি বলতে গেলে বেডিংহ্যামময়। জুটিতে তার রানই ছিল ৮৬, পিটারসেনের স্রেফ ১৬!
বেডিংহ্যামের শুরুটা যদিও ছিল অস্বস্তিময়। সুইংয়ে কয়েক দফায় পরাস্ত হন তিনি। কয়েকবার বল ব্যাটের কানায় লেগে একটুর জন্য যায়নি স্লিপে। তবে এরপর দারুণ সব শট খেলেন তিনি। বিশেষ করে, শর্ট বলের জবাব দেন দারুণভাবে।
প্রথম সেশনে ফন টন্ডার ও হামজার ব্যাটিংয়ের সময় এক পর্যায়ে ১১ ওভারে রান আসে ১৪। কিন্তু চা বিরতির আগে বেডিংহ্যামের দাপটে ১০ ওভারে আসে ৭১ রান।
শেষ সেশনে অবশ্য ভেঙে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং। শর্ট বলে দারুণ খেললেও একটিতে টাইমিং ঠিকঠক করতে না পারায় জেমিসনের বলে কাটা পড়েন বেডিংহ্যাম। ১৩ রানের জন্য পাননি সেঞ্চুরি। জেমিসন পরে বিদায় করে দেন প্রায় ২ ঘণ্টা উইকেটে কাটিয়ে ১৬ রান করা পিটারসেনকে।
রপর অপেক্ষা ছিল কেবল ম্যাচ শেষ হওয়ার। রুয়ান দু সুয়াত অপরাজিত ৩৪ রান করে ম্যাচ দীর্ঘায়িত করেন খানিকটা। শেষ তিন উইকেট নেন স্যান্টনার।
দুই দল মিলিয়ে গোটা ম্যাচে স্পিনে উইকেট পড়েছে ১৭টি। ২০০৬ সালের পর নিউ জিল্যান্ডে এক টেস্টে স্পিনে এত উইকেটের পতন আর হয়নি।
কেন উইলিয়ামসন মাচের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেও প্রথম ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরি আর দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা রাচিন রবীন্দ্র।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কখনোই সিরিজ জিততে পারেনি নিউ জিল্যান্ড। এবার দ্বিতীয় সারির এই দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সেই খরা কাটবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। সিরিজের শেষ টেস্ট হ্যামিল্টনে আগামী বুধবার থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫১১
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১৬২
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৪৩ ওভারে ১৭৯/৪ (ডি.)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫২৯) ৮০ ওভারে ২৪৭ (মুর ০, ব্রান্ড ৩, ফন টন্ডার ৩১, হামজা ৩৬, বেডিংহ্যাম ৮৭, পিটারসেন ১৬, দু সুয়াত ৩৪*, ফরটান ১১, অলিভিয়ের ১, মোরেকি ৬, প্যাটারসন ১৫; সাউদি ১০-৩-৪৬-১, হেনরি ১১-৩-৩৩-১, জেমিসন ১৭-৩-৫৮-৪, স্যান্টনার ২৬-৩-৫৯-৩, ফিলিপস ৯-১-৩০-১, রবীন্দ্র ৭-২-১৮-০)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ২৮১ রানে জয়ী।
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: রাচিন রবীন্দ্র।