খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪

বিপিএলে আলিস আল ইসলামের বর্ণিল ফেরা

ইয়াসির ও মাশরাফির দুটি উইকেটের মতোই বৈচিত্র্যের দারুণ ব্যবহারে শুক্রবার সিলেট স্ট্রাইকার্সের ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন আলিস। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে স্রেফ ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জয়ের নায়ক।

অথচ এবারের বিপিএলে খেলারই কথা ছিল না ২৭ বছর বয়সী এই রহস্য স্পিনারের। প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে যে কোনো দলই নেয়নি তাকে। সেই তিনিই ঘটনাচক্রে খেলার সুযোগ পেয়ে রাখলেন নিজের সামর্থ্যের ছাপ।

স্পিন বিভাগে ভারসাম্যের জন্য ক্যারিবিয়ান রহস্য স্পিনার সুনিল নারাইনকে গত আসরের পর দলে রেখে দেয় কুমিল্লা। কিন্তু আইএল টি-টোয়েন্টিতে ব্যস্ত থাকায় আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির আগে তার বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এ কারণেই মূলত খুলেছে আলিসের দুয়ার।

সিলেট ম্যাচের পর অনেকটা নারাইনের মতোই অ্যাকশনে বোলিং করা আলিসকে দলে নেওয়ার পেছনের গল্প শোনালেন কুমিল্লার প্রধান কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

“ড্রাফটের সময় আমি একজন ক্রিকেটার কম ডাকি। সেটা আমি মনে রেখেছিলাম যে, (প্রয়োজন হলে) আলিসকে নেব। আমি অপেক্ষা করছিলাম সুনিল কখন আসবে। কারণ সুনিলের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।”

“যেহেতু সুনিল (এখনও) আসেনি, আমাদের যে বোলিং আক্রমণ আছে, তখন আমার মনে হয়েছে যে আমাদের একজন রহস্য বোলার দরকার। যে মাঝের ওভারে খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করবে অথবা শুরুতে উইকেট নিয়ে দেবে। তাই আলিসকে নেওয়া। এখন সুনিল এলে আমরা অবশ্যই আরেকটু শক্তিশালী হব।”

শুক্রবারের ম্যাচে আলিসের ছড়ি ঘোরানোর শুরু নিজের প্রথম ওভার থেকেই। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে ড্রিফটের সঙ্গে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোকা বনে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। বল প্যাডে লাগার পর তার বিস্ময়ভরা চাহনিতেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল আলিসের হাতের কারুকাজ কতটা নিখুঁত। পরে গতির তারতম্যের সঙ্গে পিচ করে সোজা যাওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন বেন কাটিং।

সিলেটের ব্যাটসম্যানদের আগে নিজের বোলিং জাদুতে অনুশীলনে কুমিল্লার ক্রিকেটারদেরও ভোগান্তিতে ফেলেন আলিস। সাকিব-মাসকো ক্রিকেট একাডেমিতে কয়েকটি অনুশীলন সেশনে বোলিংয়ের মোকাবিলা করার পর অধিনায়ক লিটন, সাবেক অধিনায়ক ইমরুল কায়েসরাই পরামর্শ দেন আলিসকে দলে নেওয়ার জন্য।

ড্রাফটের সময় একজন ক্রিকেটার কম ডাকায় কুমিল্লার জন্য সহজ হয় আলিসকে নেওয়ার পথ। দল পাওয়ার পর প্রথম ম্যাচ বেঞ্চেই কাটে এই রহস্য স্পিনারের। পরের ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেলে ঘোচে তার প্রায় চার বছরের অপেক্ষা। এবারের আগে ২০২০ সালে সবশেষ বিপিএল খেলেছিলেন আলিস।

দীর্ঘ অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটার ম্যাচটা অবশ্য ভালো কাটেনি। তিনি ৩ ওভারে খরচ করেন ৩০ রান। তবে আস্থা হারায়নি দল। ঢাকা থেকে সিলেট আসার পরেও সুযোগ পান আলিস। আর রহস্যমাখা বোলিংয়ে করেন বাজিমাত। নতুন বলে টানা চার ওভার বোলিং করেন তিনি। এর মধ্যে ১৮ বলে কোনো রানই নিতে পারেনি সিলেট।

বোলিংয়ে রহস্যের ছাপ রাখা আলিসের ক্যারিয়ার দারুণ কৌতুহল জাগানিয়া। কোনো ধরনের ক্রিকেট না খেলে ২০১৯ সালের বিপিএল দিয়ে সরাসরি স্বীকৃত ক্রিকেটে তার পথচলা শুরু। সেবার নেটে দেখে আলিসকে দলে নেন তখনকার ঢাকা ডায়নামাইটসের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ।

রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে হইচই ফেলে দেন আলিস। জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কারও। তবে সেদিনই তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলে রংপুর। পরে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য ধরাও পড়েন তিনি।

অ্যাকশন শুধরে তিনি ফেরেন ক্রিকেটে। এরপর লড়তে হয় হাঁটুর চোটের সঙ্গেও। তাই বিপিএলে অমন স্বপ্নিল অভিষেকের পরও চলতি আসরের আগে স্বীকৃত ক্রিকেটে তার ম্যাচের সংখ্যা স্রেফ ২৬টি। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লিস্ট ‘এ’ সংস্করণে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে তিনি খেলেন ৫ ম্যাচ।

এবার প্রায় চার বছর পর বৈচিত্র্যের জোর দেখিয়ে কুমিল্লার মতো তারকাখচিত দলে জায়গা পেয়েছেন আলিস। সালাউদ্দিনের বিশ্বাস বিপিএল পেরিয়ে দেশের হয়েও বড় কিছুর সম্ভাবনা রয়েছে এই রহস্য স্পিনারের।

“আমাদের দেশে আসলে রহস্য বোলার খুব কম। ছেলেটা অনেক আগে শুরু করেছে, অনেক ভালো করেছে। এর মাঝে চাকিংয়ের কারণে অনেক দিন দূরে ছিল। তারপর ওর ফেরাটা খুব কঠিন ছিল। আমরা ওর ওপর বিশ্বাস রেখেছি। ও আমার কাছে অনুশীলন করায় হয়তো আমাদের জন্য একটা সুবিধা ছিল (বিশ্বাস রাখতে)। কারণ ওকে কাছ থেকে দেখার সুযোগটা হয়েছে।”

“ওর বলে অনেক বৈচিত্র্য আছে। এই ধরনের বোলার আমরা অনেক দিন ধরে খুঁজছি। টি-টোয়েন্টিতে আমাদের দেশের ভালো করার জন্য রহস্য বোলার দরকার। যেহেতু আমারা লেগ স্পিনারও ভালো পাচ্ছি না। তাই একজন রহস্য বোলার পেলে দেশের জন্য অনেক লাভ হবে। অবশ্যই তার অনেক বৈচিত্র্য আছে। সে যদি স্নায়ু ধরে রাখতে পারে, আমার মনে হয় অনেক বড় সম্পদ হতে পারে।”

অবৈধ বোলিং অ্যাকশনে ধরা পড়ার পর সালাউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করেই আবার বোলিংয়ের ছাড়পত্র পান আলিস। বিপিএলে তার ফেরাটাও হলো সালাউদ্দিনের কোচিংয়েই। তাই ম্যাচ শেষে ব্রডকাস্টারে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোচের প্রতি আলাদা করে কৃতজ্ঞতা জানালেন আলিস।

“আমার প্রথম ম্যাচটা ভালো যায়নি। তবু সালাউদ্দিন স্যার আমাকে বলেছেন, ‘তুমি তোমার ভালো জায়গায় বল করো। তাহলে কেউ মারতে পারবে না।’ সালাউদ্দিন স্যার বাংলাদেশের এক নম্বর কোচ। তিনি বিশ্বাস করেন যে আমি পারব। তিনি আমাকে দুই বছর ধরে তৈরি করেছেন। স্যারকে বিশেষ ধন্যবাদ।”

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy