অবশেষে জয়ের দেখা পেল, হোয়াইটওয়াশ এড়াল পাকিস্তান
ক্রাইস্টচার্চে রোববার পাকিস্তান ২০ ওভারে তোলে ১৩৪ রান। কিউইরা গুটিয়ে যায় কেবল ৯২ রানেই। এই ম্যাচের আগে পাকিস্তানের হয়ে ৫৩ টি-টোয়েন্টিতে তার মোট উইকেট ছিল ৪টি, সেই ইফতিখার এবার ২৪ রানে শিকার করেন ৩ উইকেট এছাড়া ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নাওয়াজের উইকেট ২টি, ২১ রান দিয়ে লেগ স্পিনার উসামা মিরের উইকেট ১টি।
স্পিনারদের পারফরম্যান্সেই কিছুটা ফুটে উঠছে উইকেটের চিত্র। এমনিতে হ্যাগলি ওভালের উইকেট বরাবর গতিময় ও বাউন্সি হলেও এ দিন ছিল ব্যতিক্রম। আগের ম্যাচের উইকেটেই খেলা হয়েছে। উইকেট ছিল বেশ মন্থর। ম্যাচ সেরা হয়ে ইফতিখার বললেন, উইকেটের অবস্থা বুঝে ম্যাচ শুরুর আগেই অধিনায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি বলে রেখেছিলেন, এ দিন বোলিং করতে হবে তাকে।
নিউ জিল্যান্ডও এ দিন পেসারের বদলে বাড়তি স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজায়। যদিও তাদের পেসারদের পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। কিন্তু হেরে যায় তারা ব্যাটিং ব্যর্থতায়।
ছোট পুঁজি নিয়ে পাকিস্তান বোলিং শুরুই করে এক প্রান্তে স্পিন দিয়ে। প্রথম উইকেট ধরা দেয় স্পিনেই। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রাচিন রবীন্দ্রক ফেরান নাওয়াজ।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ফিন অ্যালেন এবারও ভালো শুরু করেছিলেন। শাহিন শাহ আফ্রিদি দুই ওভারে তিনটি চার মারেন তিনি, ছক্কা মারেন নাওয়াজকে। তবে ১৯ বলে ২২ রান করে তিনি জামান খানের শিকার হন পঞ্চম ওভারে। মিড অনে ভালো ক্যাচ নেন অভিষিক্ত হাসিবউল্লাহ খান।
দারুণ ফর্মে থাকা ড্যারিল মিচেলকে এ দিন বিশ্রামে রেখেছিল নিউ জিল্যান্ড। মিডল অর্ডারে তার অভাব পূরণ করতে পারেননি উইল ইয়াং, মার্ক চ্যাপম্যানরা। নিউ জিল্যান্ডের লোয়ার-মিডল ও লোয়ার অর্ডারের কেউ ভালো কিছু করতে পারেননি। শেষ আশা হয়ে টিকেছিলেন গ্লেন ফিলিপস। তবে ২২ বলে ২৬ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে ফেরানোর পর আরও একটি উইকেট নিয়ে কিউইদেরকে ৯২ রানেই থামিয়ে দেন শাহিন আফ্রিদি।
ম্যাচের শুরুটা পাকিস্তানের ভালো ছিল না মোটেও। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই হারায় তারা অভিষিক্ত হাসিবউল্লাহ খানকে। ক্রিজ ছেড় বেরিয়ে টিম সাউদিকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় আউট হন ২০ বছর বয়সী ওপেনার। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে শূন্য রানে আউট হওয়া অষ্টম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান তিনি, ওপেনারদের মধ্যে তৃতীয়।
প্রথম তিন ওভারে পাকিস্তানের রান ছিল চার। চতুর্থ ওভারে দুই বাউন্ডারিতে কিছুটা গা ঝাড়া দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। দ্বিতীয় উইকেটে বাবর আজমের সঙ্গে অর্ধশত রানের জুটিও গড়ে তোলেন তিনি। তবে রানের গতি ভালো ছিল না। ৫৩ রানের জুটি আসে ৫৬ বলে।
দ্রুত রান তুলতে না পেরে শেষ পর্যন্ত স্লগ করে ইশ সোধিকে উইকেট দেন বাবর। ১৩ রান করতে ২৪ বল খেলেন তিনি।
পাকিস্তানের ইনিংসটা গতিময় হয় ফাখার জামান ক্রিজে যাওয়ার পর। লকি ফার্গুসনকে এক ওভারে দুটি ছক্কায় ওড়ান তিনি, ছক্কা-চার মারেন ইশ সোধিকে। টিম সাউদির বলে আরও একটি ছক্কা মেরে তিনি আউট হয়ে যান ১৬ বলে ৩৩ করে।
ছোট রানের ম্যাচে তার সেই ইনিংস পরে গড়ে দেয় বড় ব্যবধান।
ইফতিখার-নাওয়াজরা ব্যাট হাতে কিছু করতে পারেননি। তবে সাহিবজাদা ফারহান সাতে নেমে একটি করে চার-ছক্কায় ১৪ বলে করেন ১৯। শেষ দিকে পেসার আব্বাস আফ্রিদির দুই ছক্কা পাকিস্তানকে নিয়ে যায় ১৩৪ পর্যন্ত।
রানের জোয়ারের সিরিজে এই পুঁজিকে তখন অপর্যাপ্ত বলেই মনে হচ্ছিল। পাকিস্তানের সামনে ছিল হোয়াইটওয়াশড হওয়ার শঙ্কা। তবে তাদের বোলাররা তা হতে দিল না।
নিউ জিল্যান্ড এরপর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, যেটি শুরু ৪ ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের কয়েকজন খেলবেন বিপিএলে। এরপর তাদের পাকিস্তান সুপার লিগ শুরু ১৭ ফেব্রুয়ারি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (হাসিবউল্লাহ ০, রিজওয়ান ৩৮, বাবর ১৩, ফাখার ৩৩, নাওয়াজ ১, ইফতিখার ৫, সাহিবজাদা ১৯, শাহিন আফ্রিদি ১, আব্বাস আফ্রিদি ১৪*, উসমার ১*; সাউদি ৪-১-১৯-২, হেনরি ৪-০-৩০-২, ফার্গুসন ৪-০-২৪-২, স্যান্টনার ৪-০-৩০-০, সোধি ৪-০-২২-২)।
নিউ জিল্যান্ড: ১৭.২ ওভারে ৯২ (অ্যালেন ২২, রবীন্দ্র ১, সাইফার্ট ১৯, ইয়াং ১২, চ্যাপম্যান ১, ফিলিপস ২৬, স্যান্টনার ৪, হেনরি ১, সোধি ১, সাউদি ৪*, ফার্গুসন ০; শাহিন আফ্রিদি ৩.২-০-২০-২, নাওয়াজ ৪-০-১৮-২, জামান ১-০-৪-১, উসামা ৪-০-২১-১, আব্বাস আফ্রিদি ১-০-৪-০, ইফতিখার ৪-০-২৪-৩)।
ফল: পাকিস্তান ৪২ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ৪-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইফতিখার আহমেদ।
ম্যান অব দা সিরিজ: ফিন অ্যালেন।