ব্যাটিং বিপর্যয়ে ডাচদের কাছে ৮৭ রানের পরাজয় বাংলাদেশের
শনিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ৩৩ বছর পর খেলতে নামে বাংলাদেশ, বিশ্বকাপের ২৮তম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ডস। টসে জিতে নেদারল্যান্ডস ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিলেও শুরুটা মোটেও ভাল করতে পারেনি ডাচরা। দলীয় ৩ রানের মাথায়, ৯ বলে ৩ রান করে তাসকিন আহমেদের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন ডাচ ওপেনার বিক্রমজিত। এরপরের ওভারে দলীয় ৪ রানে ম্যাক্স ও’ডাউডকে শূন্য হাতে সাজঘরে ফেরান শরিফুল ইসলাম। ৪ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন ওয়েসলি বারেসি এবং কলিন অ্যাকারম্যান। জুটি জমলেও বিপদের কারণ হয়নি, ৫৯ রানের এই জুটি বিপদজনক হওয়ার আগেই ৪১ বলে ৪১ রান করে ওয়েসলি বারেসি দলীয় ৬৩ রানের মাথায় কাটার-মাস্টার মুস্তাফিজের শিকার হন। খানিক পর সাকিবের বলে সুইপের চেষ্টায় সহজ ক্যাচ দিয়ে মাত্র ১৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন অ্যাকারম্যানও। এক ওভার পর স্কট এডওয়ার্ডসকে দুবার আউটের সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। মোস্তাফিজের বলে গালিতে তীব্র গতিতে যাওয়া ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস, পরের বলে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে কিপার মুশফিকুর রহিম গ্লাভসে জমাতে পারেননি বল।
যার মাশুল স্বরূপ নেদারল্যান্ডস ২০০ রান পার করতে সক্ষম হয়। শূন্য রানে টানা দুবার জীবন পেয়ে এডওয়ার্ডস জমে যান ক্রিজে। বাস ডি লিডির সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে জুটিতে যোগ করেন ৪৪ রান। তাসকিন এসে বাড়তি বাউন্সে ডি লিডিকে ফেরালেও সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটের সঙ্গে আরেক জুটি গড়ে তোলেন ডাচ অধিনায়ক। এডওয়ার্ডস-সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটের জুটির রান তোলার গতি ধীর হলেও দলকে সম্মানজনক জায়গার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন তারা। মোস্তাফিজের বলে এঙ্গেলব্রেখট ক্যাচ উঠালেও মেহেদী হাসান মিরাজ তা ছেড়ে দেন। ২৯ রানে জীবন পেয়েও বেশি দূর বাড়তে পারেনি, শেখ মেহেদীর বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
তার আগে এডওয়ার্ডসের মূল্যবান উইকেট পেয়ে যান মোস্তাফিজ। ৮৯ বলে ৬৮ করে তিনি ফেরার পর ভাটার টান পড়ে ডাচদের ইনিংসে। শেষ দিকে লোগান ফন বিক ১৬ বলে ২৩ রান করলে কিছুটা লড়াইয়ের পুঁজি পায় ডাচরা। কিন্তু শেখ মেহেদীর করা শেষ ওভারে ১৭ রান না এলে তাদের লড়াইটা আরও সাদামাটা হতো।
টাইগার শিবিরের ৪ জন বোলার নেন ২টি করে উইকেট যার মধ্যে অন্যতম মুস্তাফিজ, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পায় একটি উইকেট।
২৩০ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪.২ ওভারে মাত্র ১৯ রানের জুটি গড়ে ফেরেন ওপেনার লিটন কুমার দাস। ঠিক পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে ফেরেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। ১৯ রানে ২ ওপেনার হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ দল। দলকে খেলায় ফেরাতে ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসানও। লিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাকিব আল হাসানরা যথাক্রমে ৩, ১৫, ৯ ও ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন। চতুর্থ ব্যাটসমেন হিসেবে অধিনায়ক সাকিব ১৪ বলে ৫ রান করে ফেরার পথে ড্রেসিংরুমের কাছে এলে ক্লাব হাউজ গ্যালারি থেকে ভেসে আসে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ ধ্বনি। যারা বলছিলেন তারা সবাই ছিলেন বাংলাদেশের সমর্থক।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে ৪০ বলে ৫টি চার আর ১ ছয়ে ৩৫ রান করে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। দলীয় ৭০ রানে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমও। তিনি ৫ বলে মাত্র ১ রান করে আউট হন।
সপ্তম উইকেটে শেখ মেহেদি হাসানকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই জুটিতে আসে ৭১ বলে ৩৮ রান। এরপর মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন শেখ মেহেদি ও মাহমুদউল্লাহ। ৩৮ বলে ১৭ রানে রান আউট হয়ে ফেরেন শেখ মেহেদি, ৪০ বলে ২০ রান করে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দশ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৫ বলে ২ চার আর এক ছয়ে ২০ রান করে হারের ব্যবধান কিছুটা কমান পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। ৪২.২ ওভারে মাত্র ১৪২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ফলে ডাচরা পায় ৮৭ রানের জয়। ডাচ শিবিরের পল ফন মিকেরেন ৪টি ও বাস ডি লিডি ২টি উইকেট নেন।
স্কোর