টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ১ উইকেটে জয়
বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে অনুষ্ঠিত ২৬তম ম্যাচটিতে অবশেষে শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয়তার দেখা পাওয়া গেল! এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে সকলের অভিযোগ ছিল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ পাওয়া যাচ্ছে না বলে, সকলের সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিল পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার এই ম্যাচ। আর টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এই ম্যাচে পাকিস্তানের করা ২৭০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১ উইকেটের চরম নাটকীয় জয় পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের পর আর কোনো বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই যুগ পর আইসিসির এবারের আয়োজনে তারা হারের বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে এসেছে। এক কথায় বলতে গেলে প্রোটিয়া ব্যাটসমেন এইডেন মার্করামের কাছেই হেরে গেল বাবর আজমের দল। যদিও তাকে সাজঘরে পাঠিয়ে শেষদিকে নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছিলো পাকিস্তান। কিন্তু তার আগেই ৯১ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের পথ সহজ করে দিয়ে যান মার্করাম। শেষ পর্যন্ত প্রোটিয়ারা পাকিস্তানের দেওয়া ২৭১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ১ উইকেটে জিতেছে।
চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভাল করতে পারেনি পাকিস্তান, দলীয় ৩৮ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক এবং ইমাম উল হক। এরপর পাক অধিনায়ক বাবর আজম মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে বেশ ভালোই খেলছিলেন। তৃতীয় উইকেটে রিজওয়ান এবং বাবর মিলে যোগ করেন ৪৮ রান, দলীয় ৮৬ রানের মাথায় বিদায় নেন রিজওয়ান। কিন্তু বাবর এক প্রান্ত আগলে রেখে দারুণভাবে খেলে যাচ্ছিলেন। কৌশলী ব্যাটিংয়ে দারুণ এক ফিফটি তুলে নেন তিনি। তবে ফিফটির পরে বেশিদূর আগাতে পারেননি বাবর, ৬৫ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান পাকিস্তানের এই অধিনায়ক। বাবরের সাজঘরে ফেরার পর দলের হাল ধরেন শাদাব খান এবং সাউদ শাকিল। ৬ষ্ঠ উইকেটের এই জুটিতে দুজন মিলে যোগ করেন ৮৪ রান। দলীয় ২২৫ রানের মাথায় আউট হন শাদাব খান, সঙ্গী শাদাব ফিফটি ছুঁতে না পারলেও দেখেশুনে খেলে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটির দেখা পান শাকিল। তবে অধিনায়ক বাবরের মতো ফিফটির পরে বেশিদূর যেতে পারেননি শাকিল, ৫২ বলে ৫২ রান করে তিনি ফিরে যান সাজঘরের দিকে। শেষ দিকে মোহাম্মদ নাওয়াজ ২৪ বলে ২৪ রানের ইনিংস খেললে ২৫০ পার করে পাকিস্তান। শেষপর্যন্ত ৪৬.৪ ওভারে ২৭০ রান তুলতে অলআউট হয় পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন তাবরিজ শামসি, ৩ উইকেট নেন মার্কো ইয়ানসেন, ২ উইকেট তোলেন কেশভ মহারাজ। অন্যদিকে ১ উইকেট ঝুলিতে পুড়েছেন লুঙ্গি এনগিডি।
পাকিস্তানের করা ২৭০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটাও ভালো হয়নি, ২১.৪ ওভারে মাত্র ১৩৬ রান করতেই ৪ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। দলীয় ৩৪ রানে ডি কক, ৬৭ রানে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা, ১২১ রানে রেসি ফন ডার ডুসেন এবং ১৩৬ রানে হাইনরিখ ক্লাসেন সাজঘরে ফিরে গেলে পাকিস্তানের পাল্লা ভারী মনে করতে থাকে সমর্থকরা। কিন্তু এইডেন মার্করাম যে পাকিস্তানের বড় বাধা আর দক্ষিণ আফ্রিকার বড় আশা হয়ে জেগে উঠবেন তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। তার খেলা ৯৩ বলে ৯১ রানের ইনিংসটি প্রোটিয়াদের ম্যাচ জয়ের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। ভাগ্যকেও পাশে পেয়েছেন মার্করাম, একাধিকবার রানআউটের হাত থেকে বেঁচেছেন, বেশ কয়েকটি ক্যাচ অল্পের জন্য গেছে ফিল্ডারের নাগালের বাইরে দিয়ে। শেষদিকে ১৮ বলে মাত্র ৫ রান দরকার ছিল প্রোটিয়াদের, তবে তাদের হাতে ছিল মাত্র এক উইকেট। অন্যদিকে আগেই তিন পেসারের কোটা পূরণ করে ফেলা পাক অধিনায়ক বাবরকে জয় নিশ্চিত করতে স্পিনারের ওপরই নির্ভর করতে হয়েছিল। যার প্রতিদান দিতে পারেননি মোহাম্মদ নাওয়াজ। তার করা দুটি বলেরই লাইন ছিল লেগ-স্টাম্প থেকে বাইরে! যাতে কেশব মহারাজ আলতো ব্যাটের ছোঁয়া দিতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তানের পক্ষে শাহীন আফ্রিদি ৩টি, মোহাম্মদ নাওয়াজ, মোহাম্মদ ওয়াসিম এবং বিশ্বকাপের প্রথম কনকাশন-বদলি হিসেবে আসা উসামা মির নেন ২টি করে উইকেট।
এই জয়ের ফলে ভারতকে টপকে পয়েন্ট টেবিলে সবার উপরে অবস্থান করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে ছয় ম্যাচে পাকিস্তানের টানা চতুর্থ পরাজয় এটি। ৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান পয়েন্ট তালিকার ষষ্ঠ স্থানে। তাদের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনায় লেগেছে জোরালো ধাক্কা।
স্কোর