জোকোভিচের অপেক্ষা বাড়িয়ে ফাইনালে মুখোমুখি সিনার ও আলকারাজ
২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের অপেক্ষা বেড়েই চলেছে সার্বিয়ান তারকার। জোকোভিচের অপেক্ষা বাড়িয়ে ফাইনালে মুখোমুখি সিনার ও আলকারাজ।
ইউএস ওপেনের সেমি-ফাইনালে কার্লোস আলকারাজের কাছে হেরে বিদায় নিলেন জোকোভিচ।
আর্থার অ্যাশে স্টেডিয়ামে তারুণ্যের শক্তির কাছে আবারও পরাস্ত হলেন নোভাক জোকোভিচ।
র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় বাছাই কার্লোস আলকারাজের কাছে ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে সরাসরি সেটে উড়ে গেলেন ৩৮ বছর বয়সী জোকোভিচ।
গতকাল রাতে পুরুষ এককের প্রথম সেমিফাইনালে ২৪টি গ্র্যান্ড স্লামের মালিক জোকোভিচকে ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিটের লড়াইয়ে ৬-৪, ৭-৬ (৭-৪), ৬-২ গেমে হারান ২২ বছর বয়সী আলকারাজ।
এই হারে জোকোভিচের রেকর্ড ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হলো।
এই জয়ে একাধিক রেকর্ড গড়েছেন আলকারাজ।
মাত্র ২২ বছর ১২৩ দিন বয়সে টেনিসের ওপেন যুগে সব ধরনের কোর্টে একাধিকবার গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালে ওঠা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় এখন তিনি।
২০২৩ সালে ইউএস ওপেনের পর আর গ্র্যান্ড স্লাম জিততে পারেননি জোকোভিচ।
আলকারাজ শুরুতে খুব একটা স্বাভাবিক ছন্দে খেলতে না পারলেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ঠিকই ধরে রাখেন। জমে ওঠা দ্বিতীয় সেটের নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারে।
তবে তৃতীয় সেটের শুরু থেকেই শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন সার্বিয়ান তারকা জোকোভিচ। এর মধ্যে টানা দুটি ‘ডাবল ফল্ট’ করে আরও পিছিয়ে পড়েন সার্বিয়ান তারকা, যা আলকারাজকে এগিয়ে দেয় ৩-১ গেমে।
সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেত পারেননি জোকোভিচ।
তৃতীয় সেটে অনেকটা একপেশে জয়ই তুলে নিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটেন আলকারাজ।
ম্যাচ শেষে নেটের পাশে দাঁড়িয়ে আলকারাজকে অভিনন্দন জানান সপ্তম বাছাই জোকোভিচ, এরপর দর্শকদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে বিদায় নেন স্টেডিয়াম থেকে।
ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে আলকারাজ বলেছেন,
‘আবারও ফাইনালে উঠতে পারার অনুভূতি অসাধারণ। এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। আজকের ম্যাচটা হয়তো টুর্নামেন্টে আমার সেরা খেলা ছিল না, তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঠান্ডা মাথায় খেলেছি।’
এদিকে ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের অপেক্ষায় দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনই হাল ছাড়তে নারাজ জোকোভিচ; পাশাপাশি অবশ্য বলেছেন অনিশ্চয়তার কথাও।
সেমিফাইনালে হারের পর সার্বিয়ান এই মহাতারকা বলেছেন,
‘আমি এখনো গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলতে চাই, আগামী বছরও পুরো মৌসুম খেলতে চাই। তা হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে গ্র্যান্ড স্লাম তো আলাদা ব্যাপার—এগুলো অন্য যেকোনো টুর্নামেন্টের মতো নয়। এগুলোই আমাদের খেলাধুলার মূল স্তম্ভ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসর।’
ছেলেদের টেনিসে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম জেতা জোকোভিচ অবশ্য নিজের সীমাবদ্ধতার কথাও অকপটে স্বীকার করলেন,
‘সাধ্যে যতটা কুলায়, আমি ততটুকুই করতে পারব। ভবিষ্যতে গ্র্যান্ড স্লামে সিনার আর আলকারাজকে পাঁচ সেটের ম্যাচে হারানো আমার জন্য খুব কঠিন হবে। তিন সেটের ম্যাচে আমার সুযোগ বেশি, কিন্তু পাঁচ সেটে বিষয়টা অনেক কঠিন।
তবু আমি হাল ছাড়ছি না। গ্র্যান্ড স্লামে লড়াই চালিয়ে যাব। ফাইনালে ওঠার চেষ্টা করব এবং অন্তত আরেকটি ট্রফির জন্য লড়ব।’
২০২২ সালের ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন আলকারাজ ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছেন ইতালির শীর্ষ বাছাই ইয়ানিক সিনারকে।
দ্বিতীয় সেমিফাইনালে সিনার কানাডার ২৫তম বাছাই ফেলিক্স অগের-আলিয়াসিমকে হারিয়েছেন ৬–১, ৩–৬, ৬–৩ ও ৬–৪ গেমে।
ইউএস ওপেনের ফাইনালে উঠে নজিরও গড়েছেন সিনার।
তার আগে ওপেন যুগে রড লেভার, রজার ফেদেরার ও নোভাক জোকোভিচ এক বছরের চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামেরই ফাইনালে উঠেছিলেন। চতুর্থ খেলোয়াড় হিসাবে এই কীর্তি হল সিনারের।
চলতি বছরের চারটির মধ্যে তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে মুখোমুখি সিনার ও আলকারাজ।
সিনার অবশ্য টানা পাঁচ গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালে উঠলেন। আগের চার ফাইনালের মধ্যে তিনটি জিতেছেন তিনি।
হারতে হয়েছে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে। এই আলকারাজের কাছেই।
আবার পরের গ্র্যান্ড স্লামে উইম্বলডন ফাইনালে সেই আলকারাজকেই হারিয়েছেন। অর্থাৎ, চলতি বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্লামে বোঝা যাবে, বছরটা কার ভাল গেল। কে শীর্ষবাছাই হিসাবে বছর শেষ করবেন।
ফাইনালে পৌঁছে সিনার বললেন,
‘এই কোর্টেই তো আমাদের লড়াইয়ের শুরু। গোটা দুনিয়া আমাদের চিনল। তার পর অনেকটা সময় কেটেছে। আলকারাজও সেই আলকারাজ নেই। আমিও সেই সিনার নেই। দু’জনেই আরও উন্নতি করেছি। তাই এ বার লড়াই আরও কঠিন।’



