স্কটল্যান্ড ট্র্যাজিডির পোস্টমর্টেম
‘অবশ্যই আমি হতাশ, এই মুহূর্তে আমার হতাশ না হয়ে কোন উপায় ও নেই’। কথাগুলো মাথা নিচু করে বেশ নিম্ন স্বরে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন টাইগার দলপতি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
গতকাল ওমানের আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে স্কটল্যান্ড এর কাছে ৬ রানে হারে বাংলাদেশ দল।
এমন হারে প্রথমে যে বিষয়টি সামনে আসে সেটি হচ্ছে, টস। টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। যে ব্যাটিং লাইনআপে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ,আফিফ, সোহানদের মত খেলোয়াড়েরা আছেন সেখানে আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে প্রথমে ব্যাটিং করে নিয়ে হেসে খেলে বড় একটি লক্ষ্য পুঁজি করে দেয়া যেত স্কটল্যান্ড এর বিপক্ষে। বাংলাদেশ দল যেহেতু স্কটল্যান্ডের থেকে র্য্যাংকিং এ উপরের দিকে তাই স্কটল্যান্ড এর সামনে বড় একটি স্কোর দাড় করিয়ে চাপে ফেলে দেওয়া যেত। এমন একটি বড় ভুল সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত টাইগার ব্যাটাররাই চাপে পড়ে ব্যার্থ হন।
ব্যার্থতার কারন আরেকটি জায়গায়। একাদশ নির্বাচন। বাংলাদেশ বলতে গেলে ওপেনিং জুটি থেকে রান আসাও ভুলে যেতে চলছে। বরাবরের মতই দলে ওপেনার হিসেবে ছিলেন সৌম্য সরকার ও লিটন কুমার দাস। যেখানে প্রায় ম্যাচেই ব্যার্থ তারা দু’জন। কিন্তু সৌম্য সরকার এর আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে তুলনামূলক ভাল পারফর্ম করেছিলেন। অপর পক্ষে লিটন খারাপ ফর্মের বৃত্ত থেকেই বের হতে পারছিলেন না, এই ম্যাচেও ৫ রান নিয়ে সেই বৃত্তেই বন্দি। ওপেনিং এ নাঈম শেখকে সৌম্য অথবা লিটন এর জায়গায় স্থান দেয়া গেলে হয়ত ভাল কিছু হত।
ব্যর্থতার আরেকটি কারন হতে পারে ফর্মের তুঙ্গে থাকা নাসুম কে না খেলিয়ে তিন পেসার খেলানো। নাসুম ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নতুন বলে ভাল পারফরম্যান্স করেছিলেন। গত ম্যাচেও সবচেয়ে সফল বোলার সাকিব আর শেখ মেহেদী। মেহেদী ৩ উইকেট আর সাকিব ২ উইকেট। দুজনই স্পিনার। সেক্ষেত্রে তিন পেসারের জায়গায় দুই পেসার খেলিয়ে নাসুম আহমেদ কে সুযোগ দিলে ম্যাচের ফলাফল অন্যদিকে মোড় নিতে পারত।
ব্যাটিং ব্যার্থতা:
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ সবচেয়ে বেশি দুষছেন ব্যাটিং বিপর্যয়কে। বরাবরের মতই ব্যর্থ ছিলেন দুই টাইগার ওপেনার সৌম্য ও লিটন। দুই জনই ব্যাক্তিগত পাচঁ রান করে ড্রেসিং রুমে যান। এরপর আসেন সাকিব- মুশফিক। দলকে শুরুর বিপর্যয় থেকে মুক্তি দিতে লড়ে যান তারা। কার্যত মন্থর ব্যাটিং করে চাপের দিকেই নিয়ে গেছেন। সম্প্রতি আইপিএল খেলা লবিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব করেন ২৮ বলে ২০ রান। যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বড্ড বেমানান। মুশফিক তার ব্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়ে দলকে টেনে নিতে করেন ৩৬ বলে ৩৮ রান। আর অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ২৩। মূলত এই তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের
ডট বল দেয়ার যে চাপ সেই চাপ থেকে বের হওয়া অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়েছিলো লোয়ার মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের।
পরিপক্ক ক্যাপ্টেনের অপরিপক্কতা
বাংলাদেশ -স্কটল্যান্ড ম্যাচের পূর্বের দিনের সংবাদ সম্মেলনে টাইগার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ফাঁস করে দিলেন তার গেম প্ল্যান এর অংশ। বলেছিলেন,পেস আক্রমণই হবে। এমন কথা শুনে নিশ্চই স্কটল্যান্ড ম্যানেজম্যান্ট রাতারাতি বাংলাদেশি পেসারদের নিয়ে একটু বেশি চুলচেরা বিশ্লেষণ চালিয়েছেন। না হলে ম্যাচে এই রকম তুলোধুনো করে ছাড়তেন না টাইগার পেসারদের।
টসে জিতে ফিল্ডিং বেছে নেওয়া, ব্যাটিং এ মন্থর গতি, সংবাদ সম্মেলনে গেম প্ল্যান ফাঁস করা র্যাংকিং এ নিচে থাকা স্কটল্যান্ড এর বিপক্ষে অধিনায়কের এমন অতি আত্মবিশ্বাসি সিদ্ধান্ত নিশ্চিয় পরবর্তীতে ভুগিয়েছে দারুণ।
ম্যানেজমেন্টের এক ঘেঁয়েমি সিদ্ধান্তে ঘরের মাঠ মিরপুরে যাচ্ছেতাই স্লো উইকেট বানিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি নিউজিল্যান্ড- অস্ট্রেলিয়া কে হারানোর চেয়ে বিশ্ব মঞ্চে টাইগার দের ব্যাটিং ব্যার্থতায় স্কটিশদের থেকে হারার লজ্জা ডুবিয়েছে বহুগুন।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে স্কটিশ গুরু শন বার্গার এর দেওয়া হুমকির চাপ, অতি আত্মবিশ্বাসি বাংলাদেশ সেই চাপ কে কাটিয়ে উঠতে না পেরে ব্যর্থ হয়েছে।
দিনশেষে, ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা।
মাহমুদউল্লাহর মতে, পরবর্তী ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয়ের এমন পুনরাবৃত্তি ঘটলে ফলাফল অন্যদিকে যাবে।
এমন হলে মূল পর্ব না খেলেই হয়তো বিদায় নিতে হবে টাইগারদের।