প্যান্ডোরা পেপার্সের জালে শচীন-গার্দিওলা
এ যেন ঘূর্ণিঝড়! চার পাশে তান্ডব চালিয়ে তচনচ হয়ে যাচ্ছে সবকিছু।যা নিয়ে তুলপাড় সারা বিশ্ব।এই মুহূর্তে সেই ঘূর্ণিঝড় টার নাম ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’।
গোটা বিশ্বের ৩৫ রাষ্ট্র নেতা,৩০০ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী , সেনা কর্মকর্তা, রকস্টার, বিলিয়নারসহ আরও অনেকের গোপন সম্পদ ও লেনদেনে ফাঁকি দেওয়ার তথ্য ফাঁস করে তালিকা তৈরি করেছে ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’ । ক্রীড়া মহলে তালিকায় ক্রীড়া জগতের দুই কিংবদন্তির নাম দেখে আলোড়ন হচ্ছে বেশ। একজন ভারতের সাবেক চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার শচিন টেন্ডুলকার এবং ফুটবলের সাবেক খেলোয়াড় ও বর্তমানের জনপ্রিয় ম্যান সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা। তাদের আয় গোপন করার নথি ফাঁস হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) বলছে, ভারতের টেন্ডুলকার ও তার পরিবারের সদস্যরা ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে একটি অফশোর কোম্পানির মালিকানা ক্রয় করে ছিলেন।
প্যান্ডোরা পেপার্সের অংশ হিসেবে পানামা ল ফার্ম অ্যালকোগালের নথিপত্র তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে, সাস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরিমানের শেয়ার মালিকানা আছে টেন্ডুলকার, তার স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকার ও শ্বশুরের নামে।
কোম্পানিটি ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এর শেয়ারের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ বুঝে পান শেয়ারহোল্ডাররা। ভারতের এক সংবাদ মাধ্যমের এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, টেন্ডুলকার ও তার পরিবারের দুজন পান মোট ২৮ শেয়ারের সমপরিমাণ অর্থ।যা সর্বমোট দাড়ায়, দুই কোটি ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৪৯৮ মার্কিন ডলার।
২০০৭ সালের ১০ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত এই অফশোর কোম্পানির শুরুতে মোট ৯০টি শেয়ার বিক্রি দেখানো হয়েছে। এর প্রতিটি শেয়ারের গড় ‘বাইব্যাক মূল্য’ ৯৬ হাজার ডলার। সেই হিসেবে ৯০ শেয়ারের মোট মূল্য ৮৬ লাখ ডলার।
মিসেস টেন্ডুলকার প্রথমে ৬০টি শেয়ারের সার্টিফিকেট পান আর তার বাবা পান ৩০ শেয়ারের সার্টিফিকেট। তাদের বাকি শেয়ারের বাইব্যাক মূল্য পাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে, গার্দিওলার ফাঁস হওয়া আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের সময়ের।
স্পেনের টিভি চ্যানেল ‘লা সেক্সতা’ ও সংবাদপত্র ‘এল পাইস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সাল পর্যন্ত অ্যান্ডোরায় একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল গার্দিওলার। পরে স্পেনের সাবেক প্রধান মন্ত্রী মারিয়ানোর সরকারের সময় ‘কর মওকুফ’ আইনের সুবিধা নিয়ে নিজের ওই আর্থিক জটিলতার সমাপ্তি টানেন স্প্যানিশ এই কোচ।
এর আগ পর্যন্ত স্পেনের কর কর্তৃপক্ষকে ওই বিশেষ অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানাননি তিনি। ১৯৯০ থেকে ২০০১ পর্যন্ত বার্সেলোনায় খেলার পর পরের ছয় বছরে আরও চারটি ক্লাবে খেলেন এই ম্যান সিটি কোচ। ২০০৩-২০০৫ পর্যন্ত খেলেন কাতারের ক্লাব আল আহলিতে।
গার্দিওলার এক ঘনিষ্ঠ সুত্র মতে জানা যায়, ওই ক্লাবে খেলার সময়ে পাওয়া বেতনই তিনি ওই অ্যাকাউন্টে রেখেছিলেন। পরে কর মওকুফের সুবিধা নিয়ে ১০ শতাংশ কর দিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ ইউরো বৈধ করেন তিনি।
২০০৭-২০১২ পর্যন্ত সময়ে (বার্সেলোনার কোচ থাকার সময়ে) গার্দিওলা ‘রিপোক্স ইনভেস্টমেন্ট’ নামে একটি নিবন্ধিত ব্যবসা চালাতেন বলে প্যান্ডোরায় উঠে এসেছে।
‘প্যান্ডোরা পেপার্স’ এর মত ২০১৬ সালে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ‘পানামা পেপার্স’। ৯৫ হাজার অফসোর ফার্মের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি নিয়ে ‘আইসিআইজের’ সাড়ে ৬০০ র বেশি অনুসন্ধানী সাংবাদিক এই ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’ তৈরী করেন। বিবিসি সহ অনেক সংবাদ মাধ্যম বলছে, ‘পানামা পেপার্স’ ছিলো কেলেঙ্কারি ফাঁসের প্রথম ধাপ। ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’ এসে পূর্ণতা পেল।
তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলেও টেন্ডু ও গার্দি মুখ খুলেনি।