খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

বুধবার, ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তামিমের অবসরে বড় ভাই নাফিস ইকবালের আবেগঘন স্ট্যাটাস

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওপেনার তামিম ইকবালের অধ্যায় শেষ, ব্যাপারটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্ত এবং তামিমের সতীর্থদের মতো খান পরিবারের জন্যও বেশ আবেগময়। বড় ভাই নাফিস ইকবাল খান ঠিক যেনো তাই জানান দিলেন নিজের ফেইসবুক স্ট্যাটাস এর মাধ্যমে। 

 

শনিবার (১১ জানুয়ারি) নিজের ফেইসবুকে তিনি জানান,

 বাংলাদেশের জার্সিতে তামিমকে আর দেখব না, এখনও যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার জন্য, আমাদের পরিবারের জন্য দিনটি প্রচণ্ড আবেগময়।

এই তো সেদিন, ছোট্ট তামিম প্রথমবার ব্যাট হাতে নিল। সময়ের সঙ্গে আমাদেরকে চমকে দিতে থাকল। আমরা ক্রিকেট পরিবারের মানুষ, তার পরও সবাই বুঝতে পারছিলাম, তামিম আমাদের সবার চেয়ে আলাদা। ছোট থেকেই আগ্রাসী, ভয়ডর ছিল না। তখন থেকেই জানতাম, আমাদের সবাইকে ছাপিয়ে যাবে ও।

আব্বা যতদিন বেঁচে ছিলেন, তামিমকে সময় দিয়েছেন অনেক। হাত ধরে মাঠে নিয়ে যাওয়া, ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করা, ক্রিকেটের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আব্বা। আমাদের পরিবারের সবার আফসোস, তামিমকে দেশের হয়ে খেলতে দেখে যেতে পারেননি আব্বা।

আব্বার চলে যাওয়ার পর থেকে আমি চেষ্টা করেছি, তামিমকে ঠিক আগের মতো করেই মানুষ করতে। কোনো ঘাটতি, কোনো অভাব-অভিযোগ যেন ওর না থাকে। কতটুকু পেরেছি, সেটা ও ভালো বলতে পারবে। আমি নিজে ওর প্রতিটি পদক্ষেপে সবসময় গর্ব অনুভব করেছি। অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯, ওই দিনগুলিতেও ওকে নিয়ে আমার গর্বের শেষ ছিল না। ও যেখানেই খেলেছে, যে পর্যায়ে যে দলেই হোক, সবসময় সেরা ব্যাটসম্যান হতে চেয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কিছুদিন পর যখন ও জাতীয় দলে এলো, আমাদর পরিবারের জন্য সেটি ছিল যেন ঈদের দিন।

২০০৭ সালে জিম্বাবুয়েতে ওর আন্তর্জাতিক অভিষেক থেকে শুরু করে ২০২৩ সালে শেষ ম্যাচ, আমার মনে হয় না, ওর কোনো খেলা আমি মিস করেছি। লাইভ দেখতে পারিনি সবসময়, তবে পরে যে কোনোভাবে দেখে নিয়েছি। ও যে মনোযোগ দিয়ে ব্যাট করত, আমি একই একাগ্রতায় ওর খেলা দেখতাম।

তামিম আমাদেরকে সবসময় গর্বিত করেছে। আমাদের পরিবারের সবাই, যত বাচ্চা আছে, যখন নিজেরা খেলে, এমনকি আমার মেয়ে যখন ফুটবল খেলে, সবাই ২৮ নম্বর জার্সি গায়ে খেলে। ও যেমন আমাদের আপনজন, তেমনি আমাদের সুপারস্টার।

ভাই হিসেবে বললে, ওর চেয়ে ভালো কাউকে আর পেতে পারতাম না। শুধু আমি কেন, পরিবারের সবার প্রতি দারুণ যত্নশীল ও। যদিও সেটা খুব একটা প্রকাশ্যে দেখায় না, কিন্তু আমাদের জন্য সবটুকুই করে। সবার যে কোনো সমস্যায় সবার আগে এগিয়ে আসে ও।

মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবেও ওকে পেয়েছি আমি। খুবই কঠিন এবং আপোসহীন প্রতিপক্ষ। আমার মনে আছে, পোর্ট সিটি ক্রিকেট লিগে আমার বিপক্ষ দলে ছিল তামিম। আমাকে প্রচণ্ড স্লেজিং করেছিল। আমি খুবই বিব্রত হয়েছিলাম। ভাবতেও পারিনি, ওর কাছ থেকে রেকম কিছু পাব। সেদিন বুঝেছিলাম, মাঠের লড়াইয়ের ওর কাছে সবকিছুর আগে নিজের দল। আবার একসঙ্গে যতটুকু খেলতে পেরেছি জাতীয় লিগে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে, ঢাকা লিগে ব্রাদার্স, মোহামেডান, বিমানে, দেখেছি ওর চেয়ে ভালো সতীর্থ আর হয় না।

পরে জাতীয় দলে আমি যখন ম্যানেজার, ওকে পেয়েছি অধিনায়ক হিসেবে। আমার কাজের জায়গা থেকে বললে, খুবই আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল ও। সতীর্থদের তো বটেই, ম্যানেজমেন্টের যে কোনো প্রয়োজনেও ওকে দেখেছি পাশে থাকতে। এমন নয় যে সবসময় সবকিছুতে আমরা একমত ছিলাম। তবে আমি ম্যানেজার হিসেবে ওকে কিছু বোঝাতে চাইলে, বুঝত খুব ভালোভাবে।

আমার আশা ছিল, আবার ওকে দেশের জার্সিতে দেখব। ব্যক্তিগতভাবে এখনও মনে করি, তামিম ফুরিয়ে যায়নি এবং দেশকে আরও কিছু দেওয়ার ছিল ওর। তবে নিজেকে সবচেয়ে ভালো চেনে ও নিজেই। ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে ওর সঙ্গে যা হয়েছে, এটা ওর জন্য ছিল প্রচণ্ড এক ধাক্কা, যা সহ্য করার মতো নয়। ওই ব্যাপারটায় তখন আমি ভুগেছি, আমাদের পরিবার ভুগেছে। পুরো পরিবারকে দুঃসহ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিছু মানুষ এসব জায়গা থেকে বের হতে পারে, কেউ পারে না। তামিম হয়তো পারেনি। তবে ওর প্রতি সম্মান, ভালোবাসা, সমর্থন, সবটুকুই আছে আমার। আমি নিশ্চিত, সামনেও অনেক রোমাঞ্চকর সময় ওর অপেক্ষায়।

তামিম, আবারও বলছি, “তোমাকে আমরা ভালোবাসি ও তোমাকে নিয়ে সবাই অসম্ভব গর্বিত। কোথাও না কোথাও থেকে আব্বাও তৃপ্তির হাসিতে বলছেন, ‘ওয়েল ডান।”

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy