বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার জয় ৭৩ রানে। নিজ শহরের মাঠে ২৪০ রানের লক্ষ্যে ২১ বল বাকি থাকতেই ১৬৬ রানে গুটিয়ে গেছে চট্টগ্রাম। কুমিল্লার বিপক্ষে টানা সাত ম্যাচ হারল তারা।
চলতি আসরে এ নিয়ে টানা তৃতীয় জয় পেল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। সব মিলিয়ে আট ম্যাচে কুমিল্লার ষষ্ঠ জয় এটি। নয় ম্যাচে চট্টগ্রাম পেল চতুর্থ পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার কুমিল্লার জয়ের বড় কারিগর জ্যাকস। ক্যারিয়ার সেরা ১০৮ রানের ইনিংসের পর ফিল্ডিংয়ে ৫টি ক্যাচ নেন ইংলিশ তারকা। বিপিএল ইতিহাসে এক ম্যাচে এটিই সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড। ম্যাচে ৪টি ক্যাচ আছে পাঁচজনের।
জ্যাকসের সেঞ্চুরির সঙ্গে লিটন ৩১ বলে ৬০, মইন ২৪ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেললে ২৩৯ রানে পৌঁছায় কুমিল্লা। বিপিএল ইতিহাসে যৌথভাবে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। ২০১৯ সালে একই মাঠে চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ৪ উইকেটে সমান ২৩৯ রান করেছিল রংপুর রাইডার্স।
পরে বল হাতেও আলো ছড়ান আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মইন। চট্টগ্রামের শেষ তিন উইকেট তিনি নেন টানা তিন বলে। চলতি বিপিএলে দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টের অষ্টম হ্যাটট্রিক এটি। সব মিলিয়ে ২৩ রানে মইনের শিকার ৪ উইকেট।
এছাড়া এবারের আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২২ রান খরচায় নেন ৪ উইকেট।
ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে দেখেশুনে খেলেন লিটন ও জ্যাকস। প্রথম ওভার মেডেন করেন নিহাদউজ্জামান। বাঁহাতি স্পিনারের পরের ওভারে উইকেটের পেছনে জ্যাকসের ক্যাচ ছাড়েন ব্রুস। তখনও রানের খাতা খোলেননি ইংলিশ ওপেনার।
জীবন পেয়ে চট্টগ্রামকে চড়া মাশুল দিতে বাধ্য করেন জ্যাকস। পঞ্চম ওভারে আল আমিন হোসেনকে দিয়ে শুরু হয় ঝড়। প্রথম বলে ছক্কা মারেন জ্যাকস। পরের বলে পান বাউন্ডারি। পরে স্ট্রাইক পেয়ে শেষ তিন বলে দুই ছক্কা ও এক চার মারেন লিটন। ওভার থেকে আসে ২৭ রান।
পাওয়ার প্লেতে কুমিল্লা করে ৬২ রান। সপ্তম ওভারে নিহাদউজ্জামানকে স্লগ সুইপে ছক্কা মারেন জ্যাকস। শেষ দুই বলে বাউন্ডারি মারেন লিটন। স্রেফ ২৬ বলে তিনি পৌঁছে যান পঞ্চাশে। এর মধ্যে ৪৬ রানই চার-ছক্কা থেকে।
অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে লিটনকে থামান শহিদুল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে পুল শটের চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন কুমিল্লা অধিনায়ক। সমাপ্তি ঘটে তার ৯ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংসের।
পরের বলে অন সাইডে খেলার চেষ্টায় ব্যাটে লাগাতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়। এলবিডব্লিউ হয়ে খালি হাতে ফেরেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা তরুণ ব্যাটসম্যান। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি তিনি। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ব্রুক ডেভিড গেস্ট।
দ্বাদশ ওভারে গেস্টের বিদায়ের পর ইনিংসের বাকিটা এগিয়ে নেন জ্যাকস ও মইন। সৈকত আলিকে ছক্কা মেরে ৩১ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন জ্যাকস। ওই ওভারে আসে আরও একটি করে চার-ছক্কা।
আল আমিনের শর্ট বলে প্রথম ছক্কা মারেন মইন। অভিজ্ঞ পেসারের করা অষ্টাদশ ওভারে তিন ছক্কায় আসে ২২ রান। সব মিলিয়ে ৪ ওভারে তার খরচ ৬৯ রান। বিপিএল ইতিহাসে যা সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড।
পরপর দুই ওভারে মইনের দুটি ক্যাচ ছাড়েন নিহাদউজ্জামান ও তানজিদ হাসান। ইনিংসের শেষ ওভারে শহিদুলের বলে ছক্কা মেরে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে পৌঁছান জ্যাকস। একই ওভারে মারা ছক্কায় স্রেফ ২৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন মইন।
জ্যাকস-মইনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে স্রেফ ৫৩ বলে আসে ১২৮ রান। যার সৌজন্যে কুমিল্লা পায় রেকর্ড স্কোর।
রান তাড়ায় চট্টগ্রামকে দারুণ শুরু এনে দেন তানজিদ ও জশ ব্রাউন। উদ্বোধনী জুটিতে তারা ৪৫ বলে যোগ করেন ৮০ রান। দ্বিতীয় ওভারে তানভির ইসলামের বলে জোড়া চার মারেন তানজিদ। পরের ওভারে মইনকে ছক্কায় ওড়ান ব্রাউন।
চতুর্থ ওভারে তানভিরের বলে নিজের প্রথম ছক্কা মারেন তানজিদ। পরের বলেই ফিরতে পারতেন বাঁহাতি ওপেনার। কাভারে ম্যাথু ফোর্ড ও লিটন মিলে ছেড়ে দেন সহজ ক্যাচ। ২০ রানে বেঁচে যান তানজিদ।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তানভির দেন ১৯ রান। চট্টগ্রামের স্কোর দাঁড়ায় ৬১ রান। অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট লেংথ ডেলিভারি থার্ড ম্যানে জ্যাকসের হাতে ক্যাচ দেন তানজিদ। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ বলে ৪১ রান করেন তরুণ ওপেনার।
পরের ওভারে আরেক ওপেনার ব্রাউনকে ফেরান রিশাদ। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৩ বলে ব্রাউন করেন ৩৬ রান। দ্বিতীয় ওভারে রিশাদের শিকার টম ব্রুস ও শাহাদাত হোসেন। পরের ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফারকে ড্রেসিং রুমের পথ দেখান মুস্তাফিজ।
পাঁচ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় চট্টগ্রাম। ভড়কে না গিয়ে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন সৈকত। দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মারেন তিনি। চতুর্দশ ওভারে মুস্তাফিজের বলে দুটি ছক্কার সঙ্গে মারেন একটি চার। মইনের বলে ছক্কার চেষ্টায় আউট হন তিনি। ক্যামিও ইনিংসে ১ চার ও ৫ ছক্কায় ১১ বলে ৩৬ রান করেন তিনি।
পরে সপ্তদশ ওভারে মইনের হ্যাটট্রিক ও চট্টগ্রামের গুটিয়ে যাওয়া। প্রথম বলে স্টাম্পড হন শহিদুল ইসলাম। ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন আল আমিন। হ্যাটট্রিক বলে ক্রিজ ছেড়ে মারার চেষ্টায় বোল্ড হন বিলাল খান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ২৩৯/৩ (লিটন ৬০, জ্যাকস ১০৮*, হৃদয় ০, গেস্ট ১০, মইন ৫৩*; নিহাদউজ্জামান ৪-১-২৭-০, আল আমিন ৪-০-৬৯-০, বিলাল ৪-০-৪৪-০, শহিদুল ৪-০-৪৯-২, ক্যাম্ফার ২-০-২৩-০, সৈকত ২-০-২৩-১)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৬.৩ ওভারে ১৬৬ (ব্রাউন ৩৬, তানজিদ ৪১, ব্রুস ১১, শাহাদাত ১২, সৈকত ৩৬, ক্যাম্ফার ৫, শুভাগত ১৯, শহিদুল ২, নিহাদউজ্জামান ০*, আল আমিন ০, বিলাল ০; মইন ৩.৩-০-২৩-৪, তানভির ৪-০-৫৩-০, ফোর্ড ২-০-২১-০, মুস্তাফিজ ৩-০-৪৬-২, রিশাদ ৪-০-২২-৪)
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৭৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: উইল জ্যাকস