সবাই জানে নিজের রোলে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়াং এমন একটা ট্যালেন্ট যার মতো প্লেয়ার প্রতি জেনারেশনে সর্বোচ্চ এক-দু’জন দেখা যায়। কিন্তু ঠিক কোন রোলে সে সেরা এটা অধিকাংশই এব্যাপারে নিশ্চিত না।
ফ্রেঙ্কিকে একাডেমি টিম থেকে আয়াক্সের মূল দলে নিয়ে আসেন এরিক টেন হ্যাগ, তখন তার পজিশন ছিলো সেন্টার ব্যাক। এরপর এরিক টেন হ্যাগ তাকে ‘স্বাধীন’ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যে কিনা নিজের ডিফেন্সিভ ডিউটির বাইরেও মিডফিল্ডে অবদান রাখতো।
বার্সেলোনাতে ফ্রেঙ্কিকে আর্নেস্তো ভালভার্দে সর্বপ্রথম সার্জিও বুসকেটসের উত্তরসূরী হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সীদ্ধান্ত নেন সে ইভান রাকিতিচের সেন্টার মিডফিল্ড পজিশনের জন্য বেশি মানানসই হবে।
রোনাল্ড কোম্যান বার্সার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি ঠিক করেন ফ্রেঙ্কিকে ডাবল পিভটে খেলতেই হবে যেমনটা তিনি তাকে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলে খেলিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় রোল পরিবর্তন করে তাকে একপ্রকার সেকেন্ড স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিয়েছেন!
বার্সেলোনা ফ্রেঙ্কির বর্তমান কোচ জাভি হার্নান্দেজ তাকে উপরে উল্লেখিত সবগুলো রোলে ট্রাই করে দেখেছেন। কিন্তু এখনো ২৫ বছর বয়সী ফ্রেঙ্কির নিশ্চিত কোনো জায়গা হয়নি জাভির দলে।
এমনটা ঘটার কথা ছিলো না ফ্রেঙ্কির মতো একটা প্লেয়ারের সাথে যাকে একসময় কম্পেয়ার করা হতো ফ্রেঞ্চ বেকেনবাওয়ার কিংবা ইয়োহান ক্রুইফের মতো ফুটবল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ আর্টিস্টদের সঙ্গে।
লোকজন অবশ্যই আপনাকে নিয়ে এমন তুলনা দিবে না যদি আপনি মাঠের বাকী সব প্লেয়ারের থেকে স্পেশাল না হয়ে থাকেন। এই ধরনের স্পেশাল ট্যালেন্টদের ক্ষেত্রে দুইটা বিষয় লক্ষ্য করা যায়, ১) আপনার মেধা এবং সামর্থ্যকে কাজে লাগানোর জন্য কোচ পুরো ট্যাকটিকস পরিবর্তন করে ফেলবে এবং সকল পরিকল্পনা আপনাকে ঘিরে করবে। ২) ঠিক এর ভিন্ন টা।
একটা ছোট্ট স্ট্যাট দিয়ে দেখানো যায় ফ্রেঙ্কি অন্যদের তুলনায় কতটা আলাদা। সে অনেক বেশি সময় নিয়ে বল ধরে রাখে। চ্যাম্পিয়নস লীগের বিগত ৫ সিজনে ১৫৬ জন এমন মিডফিল্ডার ছিলো ১টি ক্লাবের হয়ে যারা কমপক্ষে ২৫০টি প্যাস রিসিভ করেছে। এদের মধ্যে বল রিসিভ করার পর পরবর্তী প্যাস দেওয়া পর্যন্ত সবথেকে বেশি সময় নিয়েছে আয়াক্সে থাকাকালীন ফ্রেঙ্কি ডি ইয়াং (৩.০ সেকেন্ড)। ৩য় অবস্থানেও আছে বার্সেলোনার হয়ে খেলা ফ্রেঙ্কি (২.৯০ সেকেন্ড)
এটার মাধ্যমে একদমই প্রমাণ হয়না যে সে এইক্ষেত্রে খুব খারাপ কিংবা খুব ভালো। ম্যানচেস্টার সিটির বার্নার্দো সিলভাও ২.৯ সেকেন্ড সময় ব্যয় করেছে, বায়ার্ন মিউনিখের জসুয়া কিমিখ ব্যয় করেছে ২.৮ সেকেন্ড। পক্ষান্তরে ফ্রেঙ্কির টিমমেট বুসকেটস ২.২ সেকেন্ড সময় নিয়েই প্যাস দিয়ে দিয়েছে যেটা অনেকটাই দ্রুত।
কিন্তু এই সময়ের হিসাব কোয়ালিটি মাপতে না পারলেও এটা অবশ্যই প্লেয়িং স্টাইল নির্ধারণ করতে সক্ষম।
কোম্যান, যিনি কোচদের মধ্যে ফ্রেঙ্কিকে সবথেকে ভালো জানেন, তিনি একবার বলেছিলেন ফ্রেঙ্কির সবচেয়ে ভালো গুণ হচ্ছে তার ধৈর্য্য এবং এটাকে তিনি একস্ট্রা-অর্ডিনারী কোয়ালিটি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষ্যানুযায়ী “বল পায়ে থাকাকালীন অনেক সময়ই ফ্রেঙ্কি সময়কে থামিয়ে দেয়। তারপর এমন একটি প্যাস দেয় যেটা দেখে সবাই বলে- ‘আরে, দারুণ তো! চমৎকার চিন্তাভাবনা। ফুটবল এত সহজও হতে পারে!'”
ফুটবলাররা বল বেশিক্ষণ পায়ে রাখতে চায় না তার অন্যতম কারণ প্রতিপক্ষের কাছে বল লুজ করা। আপনি যদি এমন ধরনের প্লেয়ার হয়ে থাকেন যে ‘কিছুটা দেরীতে প্যাস দেয়’ তাহলে আপনার সামনে তিনটা মৌলিক অপশন আছে-
১) আপনি মাঠের এমন জায়গায় খেলেন যেখানে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররা আপনাকে মার্ক করে না।
২) আপনি প্রতিপক্ষের প্রেশারকে পরাস্ত করতে সক্ষম
৩) আপনি বল নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সক্ষম তথা ড্রিবলিং+কন্ট্রোলে খুব দক্ষ।
আশ্চর্যজনকভাবে ফ্রেঙ্কির মধ্যে এই তিনটা গুণই আছে যেখানে মাত্র একটা থাকলেই বল দেরীতে প্যাস দেওয়ার টাইপে পড়তে পারতো!
পজিশনিং দিয়ে শুরু করা যাক।
প্রতিপক্ষের ডিফেন্সিভ ব্লকের মধ্যে সময় এবং স্পেস বের করা সবথেকে কঠিন কাজের একটি। যদি কোনো প্লেয়ার এ’দুইটা বেশি করে বের করতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে ডীপে নামতে হবে নয়তো ওয়াইডে সরে যেতে হবে। ফ্রেঙ্কি এই দুইটাই করে। সে নীচে নেমে লেফট ব্যাক এবং সেন্টার ব্যাকের মাঝে পজিশন নেয়। তারপর বল রিসিভ করে সামনে বেশ খানিকটা নিজের তৈরি করা স্পেসে এগিয়ে যেতে পারে।
এই পজিশনটা তার জন্য ভালো। ফ্রেঙ্কি একবার বলেছিলো সে নিজের সেরাটা দিতে পারে যখন সে ‘ ডিফেন্সের থেকে প্রথম প্লেয়ার হিসেবে বল রিসিভ করে এবং এট্যাকের সঙ্গে লিংক তৈরি করে’
ড্রপ করে সেন্টার ব্যাকদের লাইনে নতুন পজিশন ক্রিয়েট করাতে তাদের থেকে বল রিসিভ করতে ফ্রেঙ্কিকে কোনো বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় না। এর ফলে লেফট ব্যাক উইং এ চলে যায় এবং তার জন্য রুম তৈরি করে। উইঙ্গার ড্রপ করে এবং ফ্রেঙ্কির যে পজিশনে থাকার কথা ছিলো সেই পজিশনে বল রিসিভ করার জন্য অপেক্ষা করে। এর ফলে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ব্রেক করতে সুবিধা হয় এবং উইঙ্গার সহজেই ফরোয়ার্ডের সাথে লিংক তৈরি করতে পারে।
এই রোটেশন বন্ধ করার জন্য অপনেন্টের অবশ্যই প্ল্যান থাকা লাগে। নর্মালি যে প্লেয়ার মিডে ফ্রেঙ্কিকে মার্ক করে সে যদি শেষ পর্যন্ত ফ্রেঙ্কিকে ফলো করে তাহলে তাদের ডিফেন্সে একটা বিগ হোল ক্রিয়েট হয়। অন্য কোনো ডিফেন্ডার যদি তার জায়গা পূরণ করতে যায় তো ভালো একটা প্যাসিং এরিয়া ক্রিয়েট হয়ে যায়। তারপরও প্রতিপক্ষ যদি এই দুইটা কাজ করে কিন্তু দ্রুত না হয় তবে ততক্ষণে ফ্রেঙ্কি বল নিয়ে নিজের কাজ করে ফেলবে।
আপনি যদি স্পেস ক্রিয়েট করতে পারেন তাহলে তো খুবই ভালো। কিন্তু বেশিক্ষণ বল পায়ে রাখার জন্য মাঝেমাঝে আপনাকে সবথেকে কঠিন পন্থাটি অবলম্বন করতে হয়- প্রতিপক্ষের কাউকে বিট করা। ফ্রেঙ্কি এই কাজটা খুব ভালোবাসে। এরিক টেন হ্যাগ এসম্পর্কে বলেছিলেন- ‘আপনি তাকে খুব একটা প্রেশারে ফেলতে পারবেন না’
বার্সার অধিকাংশ মিডফিল্ডারকে প্রেশার রিলিজ করার জন্য প্রতিপক্ষকে বিট করা লাগে। এক্ষেত্রে বুসকেটস বল প্রতিপক্ষের সামনে নিয়ে রাখে এবং প্রেস করা মাত্র পায়ের সাথে বলটা ঘুরিয়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করে ফেলে। জাভি যখন খেলতো তখন সে বলটাকে একপাশে নিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে প্রলুব্ধ করতো এবং পরবর্তীতে পায়ের সাথে আঠার মতো বলটা ঘুরাতে থাকতো। ফলে ডিফেন্ডার বিভ্রান্ত হতো, অনেকটা ষাঁড়কে ফাঁকি দেওয়া ম্যাটাডরের লাল কাপড় সরানোর মতোই!
ফ্রেঙ্কির প্রিয় মুভ অনেকটা জাভির ”Pelopina’র’র সম্পূর্ণ বিপরীত মুভ। সে এমনভাবে বল রিসিভ করে যেনো সে তখনই বামদিকে টার্ন করবে যেইপাশটা ডান পায়ের প্লেয়ারের ক্ষেত্রে প্যাসিং এর জন্য ন্যাচারাল। কিন্তু যখনই তাকে মার্ক করা প্লেয়ার সেদিকে চলে যায় তখনই সে ডান বলটা ডানদিকে নিয়ে আসে, এক্ষেত্রে সে রাইট বুটের বাইরের অংশ ইউজ করে।
যদিও আইডিয়াটা জাভির পুরাতন টার্নের মতোই কিন্তু আউটকামটা ভিন্ন আসে। জাভি খুব সুক্ষ্মতার সহিত ধীরগতিতে বল ঘুরাতো এবং আগেই ঠিক করে ফেলা টিমমেটকে প্যাস দিতো। ফ্রেঙ্কি এক্ষেত্রে ডান পায়ের বাইরের অংশ ইউজ করে বল নিয়ে এগিয়ে চলে। তার বডি শেইপ প্যাসিং এর জন্য নয়, বরং ড্রিবলিঙের জন্য পারফেক্ট।
FBref এর ডাটা অনুযায়ী, গতসিজনে প্রতিটি প্যাস দেওয়ার আগে ফ্রেঙ্কি ৪.৮ গজ দুরত্ব বল নিয়ে অতিক্রম করেছে যেটা সকল ডিফেন্সিভ এবং সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারদের ৮৩ শতাংশ। শুধু ফরোয়ার্ড-ক্যারি এ্যান্ড প্যাস হিসাব করলে তা দাঁড়ায় ৯৪ শতাংশ! “সে একটা আশ্চর্য, এ্যাডভেঞ্চারাস। সে সবসময় মুভ করতেই থাকে, খানিকটা একটা হাঙরের মতো” টেন হ্যাগ বলেছিলেন।
বল নিয়ে দৌঁড়ানোর সময় ফ্রেঙ্কি দুই পা ইউজ করে ড্রিবলিং করে এবং সোজা লাইনে রান মেক করে। সে তার শরীরের মাধ্যমে ধূর্ততার প্রদর্শন করে- বডি ওয়েট একপাশে নিয়ে প্রতিপক্ষকে কনভিন্স করে ফেলে যে সে ওইদিকেই যাবে কিন্তু পরমুহূর্তে অন্য পাশে চলে যায়। ফলে সহজেই ট্যাকেল মিস হয়। সে এমনভাবে এই কাজটি করে যেনো সে NFL এর কোনো দৌড়াতে থাকা প্লেয়ার এবং বল নিয়ে এমন নৃত্য প্রদর্শন করে যেনো কোনো ওপেরা টিমে নৃত্য করছে!
দ্রুত সীদ্ধান্ত না নিয়ে বল ধরে রাখার জন্য ফ্রেঙ্কি সবকিছু ট্রাই করে- রোটেশন, ড্রিবলিং, লং ক্যারি। সে বল নিয়ে দৌঁড়াতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত পারফেক্ট প্যাসিং অপশন খুঁজে পায়। মিডফিল্ডে তার ড্রিবল করে এগিয়ে যাওয়া প্রতিপক্ষকে সহজেই অগোছালো করে দেয় যেটা খুব, খুব কম প্লেয়াররা পারে। এটাই তাকে স্বতন্ত্র করে তুলে৷
এসবকিছু সে একটি পজিশনেই সবথেকে ভালোভাবে করতে পারে- ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে। তাহলে কেনো তাকে এই পজিশনে তত বেশি খেলানো হয় না?
এটার ছোট্ট সুন্দর উত্তর হতে পারে এটা- যেটা ফ্রেঙ্কি ডি ইয়াং এর জন্য বেস্ট সেটা তার টিমের জন্য সেরা দরকারী বিষয় নাও হতে পারে।
ফেব্রুয়ারিতে নাপোলির বিপক্ষে ইউরোপা লীগের প্রথম লেগের ম্যাচটাতে দৃষ্টি দেওয়া যাক যেখানে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে ফ্রেঙ্কি বুসির রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে স্টার্ট করেছিলো। বার্সা মিডে বল জিতে এবং বিল্ডআপ শুরু করে। নাপোলির বক্সের আশেপাশে পজিশন নেওয়ার পরিবর্তে ফ্রেঙ্কি ডীপে নেমে সেন্টার ব্যাকদের একটু উপরে পজিশন নেয় এবং বল নিয়ে চার সেকেন্ড ধরে রাখে। তারপর ড্রিবলিং করে মিডে ব্যাক করে এবং অন্য একজন মিডফিল্ডারকে প্যাস দিয়ে দেয়। কমপ্লিট ওয়েস্ট।
বল রিসিভ করার ৭ সেকেন্ড পর সে নিজেকে আবিষ্কার করে প্রতিপক্ষের প্লেয়ারদের ভীড়ের মাঝে৷ হ্যা, পরবর্তীতে সে ড্রিবল করে নাপোলি ডিফেন্স লাইন ব্রেক করে কিন্তু তার টিমমেটরাও এই সিচুয়েশনে জড় পদার্থের ন্যায় আচরণ করে।
এই ঘটনার সাথে বুসকেটসের একই ম্যাচে একটা ঘটনার কম্পেয়ার করা যায়। বুসকেটস ফ্রেঙ্কির বদলে শেষ ২৫ মিনিট খেলেছিলো। ড্রপ না করে বুসি অপেক্ষা করছিলো সেন্টার ব্যাকেরা প্রেশার রিলিজ করে বল প্যাস দিবে সেজন্য। সে যখন মিডে বল রিসিভ করে তখন তিনজন টিমমেট অলরেডি রান মেক করেছে। ফলে সে না তাকিয়েই দৌড়াতে থাকা জর্দি আলবাকে সহজেই পিক করতে পারে।
পজিশনাল প্লে’তে ফ্রেঙ্কির স্ট্রাগল নিয়ে জাভি কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেনি- “ফ্রেঙ্কি এমন কিছু ট্যাকটিক্যাল কনসেপ্টের সাথে পরিচিত হচ্ছে যেগুলো তার কাছে একদমই নতুন। সে শিখতেছে কিভাবে মিডফিল্ডে ফ্রী-ম্যান হওয়া যায়”
তিন সিজনে বার্সেলোনাতে চারজন ম্যানেজন ফ্রেঙ্কিকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছে।
কোম্যান আসার পর তাকে ডাবল পিভটে লেফট সাইডে খেলানে শুরু করে যেমনটা সে আয়াক্স এবং নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলে খেলেছে। কিন্তু তার এই সীদ্ধান্ত কেবল অর্ধেক সিজন পর্যন্তই টিকে।
এটা সত্যি যে কাতালোনিয়াতে ফ্রেঙ্কি নিজের ভেতরের অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে। সে একজন গিফটেড অফ-দ্য-বল রানার যে প্রতিপক্ষের লাইনে ফাটল ধরাতে সক্ষম। জাভির নতুন ৪-৩-৩ সিস্টেমে তার রোল এমনই এবং সাথে প্রতিপক্ষের বক্সের আশপাশে প্রেশার ক্রিয়েট করা এবং শর্ট নেওয়া। তার অনিয়মিত ডিফেন্সিভ প্লে অনেক জায়গা কভার করলেও তত বেশি বল রিকোভার করতে পারে না যেটা নিজ অর্ধের থেকে হাই প্রেসের সময়ই বেশি কাজে আসে। তার এই কোয়ালিটিগুলার সঙ্গে বল প্লেয়িং স্কিল আর অন্য সব গুণাবলি মিলিয়ে মোটামুটি ভালো একজন এডভান্সড মিডফিল্ডার হিসেবে তাকে আখ্যায়িত করা যায়, মাঝে মাঝে অবশ্য একটু বেশিই ভালো।
একমাত্র স্কিল যেটা তাকে স্পেশাল করে তুলেছে- ব্যাকলাইন থেকে তার ওই লম্বা, সুন্দর, সময় নষ্ট করা বল ক্যারিগুলা। কিন্তু এর জন্য তাকে ঘিরে দল গঠন করা সম্ভব নয়, সে এটার যোগ্য নয়।
চ্যাম্পিয়নস লীগে বার্সা এবং আয়াক্স, উভয়েরই XG পার্থক্য সামান্য বাজে যখন ফ্রেঙ্কি বল নিয়ে প্রগ্রেসিভ ক্যারি করে এবং যখন এমন ক্যারি করে না। এই তথ্যের মধ্যে কেবল সেই ক্যারিগুলাই ধরা হয়েছে যখন ফ্রেঙ্কি তার অবস্থান থেকে অপনেন্ট গোলপোস্টের অন্তত ২৫% জায়গা বল নিয়ে ক্যারি করেছে। এর থেকেও কম সাকসেসফুল ক্যারিগুলা হিসাব করলে হয়তো ওই XG আরো অনেক কমে যেতো।
সে হয়তো দুটি দলেরই শেইপ এলোমেলো করে দেয় কিন্তু নিজ দলের মিডে ত্রুটি তৈরি করা মর্ডান ফুটবলে খুব একটা মানানসই না।
FBref একটা তথ্য বের করেছে যেটার নাম ‘On-Off’ এটা মূলত একটা পার্থক্য, কোনো একটা নির্দিষ্ট প্লেয়ার মাঠে থাকলে এবং না থাকলে তার দল কেমন পারফর্ম করে সেটারই পার্থক্য। এখানে পার্থক্য নির্ণায়ক গোল এবং গোল হওয়ার সম্ভাবনা। এই ধরনের স্ট্যাট মূলত আইস হকি কিংবা বাস্কেটবলের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। অনেক কারণ আছে যার জন্য ফুটবলে এই টাইপের স্ট্যাট খুব একটা কার্যকর নয় তবুও কিছু একটা, খুব সামান্য হলেও পয়েন্ট আউট করা যায়।
ফ্রেঙ্কি ডি ইয়াং এর এই ‘On-Off’ রেকর্ড খুব একটা ভালো না। দুইটি ভিন্ন লীগে, পাঁচজন ভিন্ন কোচের আন্ডারে তার খেলা পাঁচটি ফুল সিজনের মধ্যে একবারও তার দল তাকেসহ বেটার পারফর্ম করেনি!
এই তথ্যগুলো অবশ্য ফ্যানদের এই বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে ব্যর্থ যে সে একজন সর্বোৎকৃষ্ট প্লেয়ার যে কিনা নিজের ন্যাচারাল পজিশনে খেললেই ইতিহাসের সেরাদের কাতারে নিজেকে নিয়ে যাবে।
কিন্তু সঠিক ট্যাকটিকস এখনো তার প্রতিভাকে আনলক করতে পারবে এবং সবাই যেমনটা মনে করে ফ্রেঙ্কি ততটাই বিখ্যাত প্লেয়ার হতে পারবে। তবে এখন হাতে কয়েকবছরের তথ্য আছে যেটা প্রমাণ করে তাকে এমন কোনো রোলে খেলানো মোটেও কোনো সহজ কাজ হবে না যেই রোলে একইসাথে তার একস্ট্রা অর্ডিনারী প্রতিভাগুলো প্রকাশ পাবে এবং তার অর্ডিনারী উইকনেসগুলো ঢেকে যাবে।
কিছু প্লেয়ার আছে যারা পুরো ক্যারিয়ারই শেষ করে ফেলে তার জন্য পারফেক্ট রোল খুঁজতে বা ফিট হতেই৷ প্রকৃতপক্ষে এটা কোনো বিষয়ই না যে ক্রয়ের সময় আপনি কতটা প্রতিভাবান ছিলেন, ট্যাকটিকসের সাথে ফিট হওয়াটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। নয়তো আপনি বাদ পড়বেন।
[The Athletic থেকে বঙ্গানুবাদ করা]
বঙ্গানুবাদ: ইস্কান্দার মির্জা হাসিব