ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে সমর্থকদের মধ্যে উন্মাদনার কমতি থাকে না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মাঠের ক্রিকেটে সেই উত্তেজনার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না।
গেল কয়েক বছরে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ফলাফলটাও যেন ঘুরেফিরে একই। হেসেখেলে পাকিস্তানকে হারানোর একপেশে লড়াই।
এবারের এশিয়া কাপের আগেও দুই দলের মহারণ ঘিরে কম উত্তাপ ছড়ায়নি।
সম্প্রতি দেশ দুটির মধ্যকার সংঘাত যেন আরও রসদ জুগিয়েছিল। তবে মাঠের লড়াইয়ে পাকিস্তানকে আরও একবার হতাশ করল ভারত।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের হাইভোল্টেজ ম্যাচে হেসেখেলে পাকিস্তানকে ২৫ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটে হারিয়েছে ভারত।
টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে যশপ্রীত বুমরা-কুলদীপ যাদবদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি পাকিস্তানি ব্যাটাররা।
ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে শেষ দিকে দারুণ এক ক্যামিও খেলেন শাহিন আফ্রিদি। তার ইনিংসে ভর করে ১২৭ রানের গড়পড়তা পুঁজি গড়ে পাকিস্তান।
জবাবে সূর্য, অভিষেক ও তিলকের ব্যাটে ভর করে ৭ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে ভারত। সেই সঙ্গে টানা দুই জয়ে সুপার ফোরে এক পা দিয়ে রাখল সূর্যকুমার যাদবের দল।
১২৮ রানের নাগালে থাকা টার্গেট তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরুর আভাস দিয়েছিলেন শুভমান গিল।
তবে বেশিদূর এগোতে পারলেন না। সাইম আইয়ুবের টানা দুই বলে চার মারার স্টাম্পড হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়।
গিলের বিদায়ের পর ঝড় তোলেন আরেক ওপেনার অভিষেক শর্মা। কেন আইসিসি টি–টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান, তা ব্যাটিংয়ে নেমেই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন।
প্রথমে টার্গেট বানিয়েছিলেন শাহিন আফ্রিদিকে।
আফ্রিদির প্রথম ওভারে একটি করে চার–ছক্কার পর তার দ্বিতীয় ওভারেই একটি করে চার–ছক্কা মেরেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
আফ্রিদির পর আইয়ুবের ওপরও চড়াও হয়েছিলেন অভিষেক। ওভারের প্রথম তিন বলে মেরেছিলেন দুই চার।
শেষমেশ লং অফে ধরা পড়লেন ফাহিম আশরাফের হাতে। আউট হওয়ার আগে করেন ১৩ বলে ৩১ রান।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ১০ ওভারেই ৮৮ রান তুলে ফেলে ভারত।
তাতে জয়ের রাস্তাও পরিষ্কার হয়ে যায়। দলের হয়ে বাকি কাজটা শেষ করেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও তিলক বার্মা।
১৫ দশমিক ৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।
৩৭ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন সূর্য।
এদিকে পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে একমাত্র সাফল্য পেয়েছেন ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়া সাইম আইয়ুব। একাই তিন উইকেট শিকার করেছেন।
এর আগে দুবাইয়ে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান করে পাকিস্তান।
দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন শাহিবজাদা ফারহান। এ ছাড়া অপরাজিত ৩৩ রান করেন আফ্রিদি।
আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি পাকিস্তানের। ইনিংসের প্রথম বৈধ বলেই উইকেট হারায় তারা।
হার্দিক পান্ডিয়ার করা অফ স্টাম্পের বাইরের কিছুটা খাটো লেংথের বল বৃত্তের ভেতরে দাঁড়ানো ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সাইম আইয়ুব, টাইমিং না হওয়ায় পয়েন্টে বুমরাহর হাতে ধরা পড়েন তিনি।
তিনে নেমে দলের বিপদ আরো বাড়ান মোহাম্মদ হারিস। এই টপ অর্ডার ব্যাটার বুমরাহর পেস আর সুইংয়ে রীতিমতো চোখে সর্ষে ফুল দেখেছেন।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বুমরাহর বলে হার্দিকের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ৫ বলে ৩ রান করেন হারিস।
৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেছিলেন ফারহান ও ফখর জামান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন তারা।
তবে উইকেটে থিতু হয়েও বাজে শটে উইকেট দিয়েছেন ফখর। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ১৫ বলে করেছেন ১৩ রান।
এরপর সালমান আলি আগা, হাসান নাওয়াজ, মোহাম্মদ নাওয়াজরা যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে।
এক প্রান্তে এমন ব্যাটিং ধসের মাঝেও আরেক প্রান্ত আগলে রেখে দারুণ ব্যাটিং করেছেন ফারহান। এই তরুণ ওপেনার ৪৪ বলে করেছেন ৪০ রান।
ফারহান আউট হওয়ার পর অনেকেই এখানেই পাকিস্তানের ইনিংসের শেষ ভেবেছিলেন। তবে আফ্রিদি সেটা হতে দেননি।
আরও একবার নিজের পাওয়ার হিটিং সামর্থ্যের প্রমাণ দেখান তিনি। ১৬ বলে চার ছক্কায় অপরাজিত ৩৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে।



