খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

শুক্রবার, ১লা আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে চলছে তুমুল উন্মাদনা, টিকিটের জন্য হাহাকার

আজ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের প্রথম হোম ম্যাচ নিয়ে চলছে তুমুল উন্মাদনা। হামজা-সামিতদের খেলা দেখার জন্য বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা যেমন উন্মুখ হয়ে আছেন, তেমন চলছে টিকিটের জন্য হাহাকার।
সাধারণ গ্যালারির আসন সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০০। ক্লাব হাউজ, ভিআইপি ও নানা ক্যাটাগরি মিলিয়ে আরও হাজার চারেকের ওপর আসন রয়েছে। বিশ হাজারের অধিক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে ফুটবলের প্রকৃত সমর্থক ও ফুটবলের স্টেকহোল্ডারদের অনেকেই টিকিট পাননি। 

 

চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের জন্য মাত্র দুটি টিকিট

ফুটবল ক্লাব নির্ভর খেলা। বাংলাদেশের ফুটবলে সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো। বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচে সেই ক্লাবগুলোতে চলছে টিকিটের হাহাকার।
বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ও লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা মোহামেডান বাফুফে থেকে মাত্র দুইটা টিকিট পেয়েছে!

মোহামেডানের ফুটবল দলের ম্যানেজার ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব বলেন,

‘বাফুফে নির্বাচনে মোহামেডানের কাউন্সিলর ছিলেন আলমগীর ভাই (ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান) তিনি কাউন্সিলর হিসেবে এবং ক্লাব সভাপতি একটি টিকিট পেয়েছেন। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোকে অন্তত দশটি করে টিকিট সৌজন্যমূলক দেওয়া উচিত ছিল। কারণ ক্লাবগুলোতে পরিচালক, কর্মকর্তা, ডোনার অনেকেই থাকেন যাদের টিকিট পাওয়া প্রাপ্য। কারণ তারা ফুটবলকে সেবা করছেন।’

 

নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা কতটি টিকিট পেলেন

সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, ৪ সহ-সভাপতি ও ১৫ জন নির্বাহী সদস্য মিলে বাফুফে নির্বাহী কমিটি ২১ জনের। নির্বাহী কমিটি মূলত দেশের ফুটবল পরিচালনা করে।
সেই নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারাও এবার টিকিট নিয়ে অনেক ভুগেছে। নির্বাহী কমিটির সবার জন্য ৪ টি ক্লাব হাউজ ও ২০ টি গ্যালারী টিকিট বরাদ্দ ছিল।

এর বাইরে কমিটির অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে টিকিট ক্রয় করেছেন। কেউ একশ, কেউ দুইশো আবার কেউ ত্রিশ-পঞ্চাশ। নির্বাহী কমিটির সদস্যরা টিকিট কিনতে পারবেন এটা অনেকেই জেনেছেন পরে। ফলে তাদের টিকিট কেনার সংখ্যাও কমছিল।

 

ফুটবল ক্লাব ছাপিয়ে সামাজিক ক্লাব প্রাধান্য

ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনী ও মোহামেডানের মতো জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ছাড়াও প্রথম, দ্বিতীয় বিভাগে অনেক ক্লাব রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল খেলে আসছেন। সকল ক্লাবই একটি/দু’টির বেশি টিকিট পাননি।

অথচ রাজধানীতে অবস্থিত সামাজিক ক্লাব টিকিট পেয়েছেন। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে ফুটবলাঙ্গনে।

প্রেস বক্সের ছাদে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অর্ধ শতাধিকের বেশি চেয়ার বসিয়েছে। যাতে সিনিয়র সাংবাদিক, ক্রীড়া সাংবাদিকদের বাইরেও অন্য সাংবাদিক কিংবা মিডিয়া জগতের কেউ এখানে বসে খেলা দেখতে পারেন।

অ্যাক্রিডিটেশনের বাইরে আরও প্রায় শতাধিক সাংবাদিক যেন খেলা দেখার জন্য এমন ব্যবস্থা থাকলেও বাফুফে সেই টিকিট স্কাই লাউঞ্জ হিসেবে বিক্রি করেছে একটি সামাজিক ক্লাবের কাছে। যা ফুটবলাঙ্গনের পাশাপাশি সাংবাদিক মহলেও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

 

রবি ‘ব্লক’ নিয়ে প্রশ্ন ফুটবলাঙ্গনে

টিকিটের চরম হাহাকার। সাবেক ফুটবলার, ক্লাব সংগঠক ও রেফারিরা টিকিটের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সেখানে বাফুফে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরুর আগেই মোবাইল কোম্পানি অপারেটর রবির কাছে টিকিট বিক্রি করেছে।

ফুটবলাঙ্গনের চাহিদা না মিটিয়ে রবির কাছে কেন টিকিট বিক্রি এটা প্রশ্ন উঠেছে ঘোরতর ভাবেই। জাতীয় স্টেডিয়ামে ভিআইপির একটি অংশে রবি হাউজ ব্যানার লেগেছে গতকাল। স্টেডিয়ামের গ্যালারির তিন নম্বর গেটে ‘সুপার রবিবার হাউজ’ নামকরণও করা হয়েছে।

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে চলছে তুমুল উন্মাদনা, টিকিটের জন্য হাহাকার

রবির এই সাজসজ্জা ও টিকিট প্রাপ্তি নিয়ে ফুটবলাঙ্গন প্রচন্ড নেতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ফুটবলে গত অর্ধ যুগের বেশি সময় পৃষ্ঠপোষকতা করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
নারী ফুটবলের অগ্রযাত্রার অন্যতম সঙ্গী ঢাকা ব্যাংক, বর্তমানে ফুটবলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক রেডিয়্যান্টসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এদের পরিবর্তে রবি ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে একটি বড় অংশ ব্লক পাওয়ায় ফুটবলাঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। রবি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্পন্সর। ফুটবলের সঙ্গে সেভাবে সম্পৃক্ত নয়।

জামালরা পাচ্ছেন তিনটি টিকিট

জামাল-হামজাদের খেলার দেখতে সবাই স্টেডিয়াম ছুটছেন। সেই জামাল-হামজাদের জন্য বাফুফে তিনটি করে টিকিট বরাদ্দ করেছে। জাতীয় দলের বর্তমান স্কোয়াডে থাকা সবাই তিনটি করে টিকিট পাবেন।
ম্যানেজার, কোচিং স্টাফদেরও সংখ্যাও এমন। জাতীয় দলের হেড কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা স্প্যানিশ হলেও তারও টিকিটের চাহিদা রয়েছে।

সাবেক ফুটবলারদের ১০০ টিকিট

সাবেক জাতীয় তারকা ফুটবলারদের জন্য ১০০ টিকিট প্রদান করেছে বাফুফে। প্রত্যেককে একটা করে টিকিট দেওয়া হয়েছে। এতে অনেক সাবেক তারকা ফুটবলার অসন্তোষ হয়েছেন।

তাদের অনেকেই এখন বাবা হয়েছেন। ফলে সন্তানকে নিয়ে খেলা দেখতে আসতে চাইলেও পারছেন না।
অর্থের বিনিময়ে টিকিট কিনতে চাইলেও সুযোগ পাচ্ছেন না অনেকেই। এতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং টিকিট পেলেও স্টেডিয়ামে আসতে পারেন।

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে চলছে তুমুল উন্মাদনা, টিকিটের জন্য হাহাকার

যাদের ভোটে নির্বাচিত কর্তারা, তাদেরই খোঁজ না রাখার অভিযোগ

বাফুফে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট বণ্টনে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কাউন্সিলর তালিকা অনুসরণ করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের একটি ক্লাব হাউজ টিকিট প্রদান করা হয়েছে।

কয়েকটি ক্লাব কিংবা জেলার কাউন্সিলরদের অবশ্য ক্লাব হাউজের পরিবর্তে ভিভিআইপি পাশ দিয়েছে ফেডারেশন। বাফুফে তাদের স্টেকহোল্ডারদের টিকিট বন্টনের ক্ষেত্রে এবার সর্বশেষ নির্বাচনের কাউন্সিলর তালিকাকে ভিত্তি হিসেবে ধরেছে।

অনেক কাউন্সিলর পলাতক কিংবা অনেক সংস্থা এবার ভোটার হতে পারেনি সেই সকল ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান টিকিট প্রাপ্তি থেকে বাতিলের খাতায় রেখেছে বাফুফে।

বাফুফের নির্বাহী কমিটি কাউন্সিলরদের ভোটেই নির্বাচিত। ভোটের সময় কাউন্সিলরদের নানা রকম অনুনয়-বিনয় করছিলেন প্রার্থীরা। বাফুফের নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়ে আসার পর আজই সবচেয়ে বড় ইভেন্ট। কাউন্সিলরদের অনেকেই টিকিট চেয়ে পাননি। এমনকি ফোন না ধরারও অভিযোগ রয়েছে অনেক।

বাফুফের নির্বাহী কমিটি কাউন্সিলরদের ভোটেই নির্বাচিত। ভোটের সময় কাউন্সিলরদের নানা রকম অনুনয়-বিনয় করছিলেন প্রার্থীরা। বাফুফের নতুন কমিটি নির্বাচিত হয়ে আসার পর আজই সবচেয়ে বড় ইভেন্ট।

কাউন্সিলরদের অনেকেই টিকিট চেয়ে পাননি। এমনকি ফোন না ধরারও অভিযোগ রয়েছে অনেক। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা চলছে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান বলেন,

‘ফুটবলের প্রকৃত স্টেকহোল্ডাররা অনেকেই উপেক্ষিত। বাফুফের উচিত ছিল ক্লাব, জেলা ও সংশ্লিষ্টদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকিট সংরক্ষিত রেখে এরপর অনলাইন কিংবা বিক্রির ব্যবস্থা করা। তৃণমূলে ফুটবল অনেক জনপ্রিয় সেখানে টিকিটের সংকট বেশি এবং আমরা তৃণমূলের সংগঠকরা এতে নিরুপায়।’

একাডেমির ফুটবলার, রেফারিরা খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন 

বাফুফে গত দেড় বছর আগে অনাবাসিক একাডেমি শুরু করেছিল। সেই একাডেমি এখনও চলছে। সেই একাডেমির ফুটবলারদের ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও আরো আগ্রহ বাড়াতে টিকিটের ব্যবস্থা করেছে ফেডারেশন।
সেই একাডেমির ফুটবলার ও অভিভাবকদের অনেকে টিকিট কিনতে পেরেছেন। এখাতে শখানেক টিকিট রয়েছে।

দেশের শীর্ষ স্থানীয় রেফারিদের মধ্যে যারা ঢাকায় অবস্থান করছেন তাদের অনেককে আজ খেলা দেখানোর ব্যবস্থা চলছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রেফারিরা কোনো টিকিট কিংবা পাস পাননি।

তবে জানা গেছে, ফিফা রেফারি ছাড়াও বিপিএল-বিসিএল পরিচালনাকারী অনেক রেফারিই খেলা দেখার সুযোগ পাবেন।

নো ডুয়েল টিকিট, সবই অনলাইন

একই ব্যক্তি নানা ভূমিকায় ক্লাব, জেলা, ফেডারেশনে নানা পদে থাকেন। বিগত সময় একই ব্যক্তি নানা পরিচয়ে একাধিক টিকিট ও কার্ড পেতেন। এবার সেটা একেবারে জিরোর কোটায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
বাফুফে নির্বাহী কমিটির কেউ ক্লাব, জেলা সংগঠক হিসেবে আলাদা টিকিট নিতে পারেননি।

আবার বাফুফের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে থাকা অনেকে টিকিট পেয়েছেন তাদের আবার ক্লাব/জেলা সংগঠক পদের জন্য টিকিট প্রদান করা হয়নি।

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট যারাই পেয়েছেন কিংবা সংগ্রহ করেছেন সবাইকে অনলাইনের মাধ্যমেই নিতে হয়েছে। বাফুফে নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদেরও ইমেইল আইডি ও অর্থ প্রদান করেই টিকিট সংগ্রহ করতে হয়েছে।

সাধারণ গ্যালারীর পাশাপাশি ক্লাব হাউজ, ভিআইপি টিকিটও অনলাইন টিকিট। খুব সামান্য কিছু পাশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

গ্যালারির ১৮ হাজার ৩০০ আসন কি আসলেই সাধারণের জন্য?

জাতীয় স্টেডিয়ামে গ্যালারির আসন সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০০। বাফুফে জনসাধারণের জন্য এই টিকিট উন্মুক্ত ও বিক্রি হয়েছিল বলে তথ্য দিয়েছিল। আসলেই কি সাধারণ ফুটবলপ্রেমী এই টিকিট পেয়েছেন কিনা এ নিয়ে ঘোরতর সংশয় রয়েছে।

বাফুফে নির্বাহী কমিটির অনেকে যারা টিকিট কিনেছেন সেই টিকিটের সিংহভাগই সাধারণ গ্যালারির। এর সংখ্যা সব মিলিয়ে হাজারের কাছাকাছি। নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ছাড়াও বাফুফে আরও নানা মাধ্যমে আরও কিছু সংখ্যক টিকিট বিক্রি ও প্রদান করেছে।

ফলে এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে সাধারণ সমর্থকদের জন্য আসলেই কি ১৮ হাজার ৩০০ টিকিট উন্মুক্ত ছিল।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy