খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

শনিবার, ২৪শে মে ২০২৫

ঐতিহাসিক সেমিফাইনালের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে বার্সেলোনাকে কাঁদিয়ে ফাইনালে ইন্টার

ইন্টার মিলান ৪–৩ বার্সেলোনা

শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই, টানটান উত্তেজনা, অকল্পনীয়, অবিস্মরণীয় একটি রাত- উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সেরা রোমাঞ্চে ঠাসা সেমিফাইনালের তালিকায় শীর্ষেই থাকবে এই ম্যাচ।
এমনই এক রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে বার্সেলোনাকে কাঁদিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল ইন্টার মিলান।

দুই দলের আরেকটি গোল–উৎসবের ম্যাচ আবারও নির্ধারিত সময়ে ৩–৩ সমতায় অমীমাংসিত থাকল। এরপর অতিরিক্ত সময়ে বাজিমাত করলেন বদলি ডেভিড ফ্রাত্তেসি।

শেষ পর্যন্ত ৪–৩ গোলে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে এই ম্যাচ জিতে দুই লেগ মিলিয়ে ৭–৬ অগ্রগামিতায় ফাইনালে পৌঁছে গেল ইন্টার, বিদায় ঘণ্টা বাজল বার্সার।

এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে গত সপ্তাহে প্রথম লেগ ৩–৩ গোলে ড্র হওয়ার পরপরই নিশ্চিত হয়েছিল ১০ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠতে হলে বার্সেলোনাকে ইতিহাস বদলাতে হবে।
কারণ, ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এই প্রতিযোগিতায় ইন্টার মিলান যে নিজেদের মাঠে কখনোই সেমিফাইনালে হারেনি!

সান সিরোয় আজ চ্যাম্পিয়নস লিগে ৯৭২ দিন অপরাজিত (১৫ ম্যাচের ১২টিতে জয়, ৩টিতে ড্র) থেকে ইয়ামাল–রাফিনিয়াদের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিলেন মার্তিনেজ–সোমার–ডামফ্রিসরা।

সেই ধারা ধরে রেখে তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠল ইন্টার।

৩১ মে মিউনিখে শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ইতালিয়ান ক্লাবটি পিএসজি অথবা আর্সেনালের মুখোমুখি হবে।

বিপরীতে ২০১৪-১৫ মৌসুমের পর এবার দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটানোর স্বপ্ন ছিল হান্সি ফ্লিকের শিষ্যদের। কিন্তু তাদের অপেক্ষার পারদ আরও বাড়িয়ে হতাশা নিয়েই ফিরতে হচ্ছে।
এর আগে দুই দলের প্রথম লেগ ছিল ৩-৩ সমতায়। ফিরতি লেগ শেষে যা দাঁড়াল ৭-৬ ব্যবধানে।

ম্যাচে বল দখল ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। গোলের জন্য ২২ শটের ১০টি লক্ষ্যে রাখতে পারে হান্সি ফ্লিকের দল। ইন্টারের ১৩ শটের ৭টি লক্ষ্যে ছিল।

ঐতিহাসিক সেমিফাইনালের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে বার্সেলোনাকে কাঁদিয়ে ফাইনালে ইন্টার

শুরুতে বল পায়ে রাখাতেই বেশি মনোযোগ ছিল দুই দলের। পরিষ্কার কোনো সুযোগ কেউ তৈরি করতে পারছিল না।

ড্রিবলিংয়ে কয়েকবার ঝলক দেখানোর পর পঞ্চদশ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন ইয়ামাল, তবে বল যায় গোলরক্ষক বরাবর।

কয়েকবার পাল্টা আক্রমণে ভীতি ছড়ানোর পর ২৩তম মিনিটে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পেয়েই এগিয়ে যায় ইন্টার। বার্সেলোনা ডিফেন্ডারের থেকে বল পেয়ে ফেদেরিকো দিমার্কো পাস দেন ডেনজেল ডামফ্রিসকে।

এই ডিফেন্ডার অন্য পাশে খুঁজে নেন চোট কাটিয়ে ফেরা লাউতারো মার্তিনেসকে।
গোলরক্ষক ভয়চেখ স্ট্যান্সনি আগেই এগিয়ে আসায় ফাঁকা জালে বল পাঠাতে ভুল করেননি বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার।

৩৬তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পায় সবশেষ ২০১৫ সালে ফাইনালে খেলা বার্সেলোনা।
তবে বক্সে ঢুকে প্রতিপক্ষের বাধায় ঠিকমতো শট নিতে পারেননি ইয়ামাল। দূরের পোস্টে ফেরান তোরেসও পাননি বলের নাগাল।

দুই মিনিট পর ২০ গজ দূর থেকে ইন্টারের হেনরিখ মেখিতারিয়ানের নিচু শট পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়।
৪১তম মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে কালহানোগলুর শটও অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।

ঐতিহাসিক সেমিফাইনালের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে বার্সেলোনাকে কাঁদিয়ে ফাইনালে ইন্টার

৪২তম মিনিটে পাউ কুবার্সির বাধায় লাউতারো মার্তিনেস বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করে ইন্টার।

প্রথমে সাড়া না দিলেও পরে ভিএআরে মনিটরে রিপ্লে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা যদিও প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

ফলাফল, সফল স্পট কিকে ব্যবধান বাড়ান কালহানোগলু।

৫৪তম মিনিটে ব্যবধান কমায় বার্সেলোনা। বক্সের বাঁ দিক থেকে জেরার্দ মার্তিনের ক্রসে চমৎকার ভলিতে ঠিকানা খুঁজে নেন ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়া।

চার মিনিট পর সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও পারেনি সফরকারীরা। প্রতিপক্ষের কর্নার রুখে পাল্টা আক্রমণে ওঠে তারা।
বক্সে মার্তিনেজের পাস ফাঁকায় পেয়ে শট নেন গার্সিয়া, দুর্দান্ত সেভে দলকে এগিয়ে রাখেন ইয়ান সোমের।

ওই হতাশার দুই মিনিট পরই অবশ্য সমতায় ফেরে বার্সেলোনা। মার্তিনের ক্রসে বক্সে দারুণ হেডে বল জালে পাঠান ওলমো।

ম্যাচে তখন ২-২ ও দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৫ সমতা।

৬৮তম মিনিটে ইয়ামালকে মিডফিল্ডার মেখিতারিয়ান ফেলে দিলে শুরুতে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
তবে বক্সের একটু বাইরে ফাউল হওয়ায় ভিএআরের সাহায্য ফ্রি-কিক দেন তিনি।

৭৭তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ইয়ামালের বাঁকানো শট ঝাঁপিয়ে এক হাতে ব্যর্থ করে দেন সোমের।

নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট বাকি থাকতে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। পেদ্রির পাস বক্সে পেয়ে রাফিনিয়ার নেওয়া প্রথম শট ঠেকিয়ে দেন সমের।

তবে ফিরতি বল আবার পেয়ে যান ব্রাজিলিয়ান তারকা, এবার জোরাল শটে দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।

পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে নাটকীয়ভাবে ৩-৩ সমতা ফেরায় ইন্টার। রক্ষণের দুর্বলতায় গোলটি হজম করে বার্সেলোনা।
বক্সের বাইরে বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হন তাদের এক ডিফেন্ডার। ডান দিক থেকে ডামফ্রিসের পাসে কাছ থেকে জালে পাঠান ফ্রান্সেসকো আচের্বি।

অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ম্যাচের ৯৯তম মিনিটে ইন্টারকে ৪-৩ গোলে এগিয়ে নেন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা ফ্রাত্তেসি।
বক্সে মেহদি তারেমির পাসে বাঁ পায়ের শটে দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে পাঠান এই মিডফিল্ডার।

১০৭তম মিনিটে সুযোগ পান রবার্ট লেভানডফস্কি। বাইলাইনের কাছ থেকে ইয়ামালের ক্রসে লাফিয়ে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ৯১তম মিনিটে বদলি নামা পোলিশ স্ট্রাইকার।
তিন মিনিট পর ফ্রাত্তেসির শট ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন স্ট্যান্সনি।

১১৪তম মিনিটে ইয়ামাল গোল পেয়েই যাচ্ছিলেন প্রায়। ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে তার জোরাল শট সোমেরের হাত ছুঁয়ে বাইরে দিয়ে যায়।
দুই মিনিট পর স্প্যানিশ ফরোয়ার্ডের আরেকটি শট ঠেকান সুইস গোলরক্ষক।

শেষ পর্যন্ত মরিয়া চেষ্টা চালিয়েও পারেনি বার্সেলোনা।

এই হারে মৌসুমে বার্সেলোনার ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনারও ইতি ঘটল।
সম্প্রতি ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রের শিরোপা জয়ী কাতালান দলটি লা লিগার শীর্ষে আছে, রেয়ালের চেয়ে চার পয়েন্টে এগিয়ে।

শনিবার (১০ মে) মুখোমুখি হবে এই দুই দল।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy