মাঝরাতে তামিম ইকবালের ভিডিও বার্তা
প্রিয় বন্ধুর বিদায়ে মাঝরাতে ভিডিও বার্তায় স্মৃতিচারণ করলেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের বন্ধুত্বের শুরুটা বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই।
পরে জাতীয় দলে একসঙ্গে দীর্ঘ পথচলায় দুজনের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে আরও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে কদিন আগেই বিদায় নিয়ে ফেলেছেন তামিম। টি-টোয়েন্টির পর এবার ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন মুশফিক।
মাঝরাতে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তামিম বলেন,
‘আজ এমন একজন ব্যক্তি অবসর নিল যার সঙ্গে আমার অলমোস্ট ২০ বছর বা ২৫ বছর একটা জার্নি। একটা স্ট্যাটাসে আসলে আমি মানুষকে বোঝাতে পারব না যে আমার ফিলিংসটা তার প্রতি।’
মুশফিকের অবসর প্রসঙ্গে তামিম বলেন,
‘আপনারা সবাই জানেন যে কিছুক্ষণ আগে মুশফিক ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছে। মুশফিককে আমি এতটুকুই বলছি যে তোর সাথে আমার খেলা শুরু অনূর্ধ্ব ১৫ থেকে। কেমনে একটা ছেলে এতটা কষ্ট করতে পারে। একটা মানুষের পক্ষে যতটা কষ্ট করা সম্ভব আমার মনে হয় সে সবটুকুই করেছে।’
খেলার প্রতি মুশফিকের ডেডিকেশন নিয়ে তামিম বলেন,
‘আমরা এটা নিয়ে অনেক সময় হাসাহাসি করি যে এত কষ্ট করে কীভাবে বা তার ডেডিকেশন খেলার প্রতি, ভালোবাসা। এটা কথায় কোনো দিন বোঝাতে পারব না। আজকে ওর খেলা ছেড়ে দেওয়া কত কষ্টকর আমি যেহেতু ওর কাছের একজন বন্ধু আমি এই জিনিসটা ফিল করতে পারি। যে এটা খুব কঠিন তার জন্য। একটা ফরম্যাটে ক্রিকেটার হিসেবে তো আমি এটা আশা করব যে ১০০তম টেস্ট অবশ্যই খেলবি তুই।’

এর আগে ২০০৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর ১৯ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২৭৪টি একদিনের ম্যাচ খেলে বুধবার অবসরের ঘোষণা দেন মুশফিকুর রহিম।
মুশফিক নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে অবসরের ঘোষণা দিয়ে লিখেছেন,
‘আজ আমি ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর ঘোষণা করছি। আলহামদুলিল্লাহ সব কিছুর জন্য। যদিও বৈশ্বিকভাবে চিন্তা করলে আমাদের অর্জন সীমিত হতে পারে। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, যখনই আমি আমার দেশের জন্য মাঠে নামতাম, আমি নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে শতভাগের বেশি দিয়ে খেলতাম।’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাজে ফর্ম ও দলের ভরাডুবির দিকে ইঙ্গিত করে মুশফিক আরও লিখেছেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল এবং আমি উপলব্ধি করেছি যে এটাই আমার ভাগ্য।’
সবশেষে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতও উদ্ধৃত করেছেন মুশফিক। লিখেছেন, ‘আল্লাহ কুরআনে বলেছেন: ‘‘তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমান করেন।’’ (সুরা আল ইমরান, ৩:২৬)। মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন এবং সকলকে সঠিক ঈমান দান করুন। সবশেষে আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই আমার পরিবার, বন্ধু এবং আমার ভক্তদের, যাদের জন্য আমি গত ১৯ বছর ধরে ক্রিকেট খেলে এসেছি।’
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকের পর গত ১৯ বছরে দেশের হয়ে মোট ২৭৪ ওয়ানডে খেলেছেন মুশফিক।
যেখানে ৩৬.৪২ গড়ে ৯ সেঞ্চুরি ও ৪৯ ফিফটির কল্যাণে ৭৭৯৫ রান করেছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার।
ওয়ানডে ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের জার্সি গায়ে করেছেন ৭৭৯৫ রান। দেশের হয়ে এই ফরম্যাটে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
তার ওপরে কেবল আছেন তামিম ইকবাল। ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে ওয়ানডেতে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই অভিজ্ঞ তারকার একসঙ্গে পথচলার গল্পে হয়তো ইতি টানল ওয়ানডে থেকে মুশফিকের অবসর।
তবে তার এই দীর্ঘ ক্যারিয়ার, নিরলস পরিশ্রম ও দেশপ্রেম চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য।