কিউদের কাছে হার দিয়ে আসর শুরু পাকিস্তানের; নেয়া হলো না প্রতিশোধ
কয়েকদিন আগেই নিউজিল্যান্ডের কাছে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা হাতছাড়া করা পাকিস্তানের কাছে বড় সুযোগ ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রতিশোধ নেওয়ার। তবে এখানেও ব্যর্থ স্বাগতিকরা। ঘরের মাঠে হার দিয়ে আসর শুরু করল মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। অন্যদিকে কিউইরা উদ্বোধনী ম্যাচেই ৬০ রানের বড় জয়ে সেমির সমীকরণ সহজ করল।
করাচিতে আজ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচ হলো একেবারে একপেশে। আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২০ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে খেলতে নেমে ৭ ওভার শেষে ১ উইকেটে ১৪ এবং ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ২২ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। এমন নড়বড়ে শুরুর পর মাঝের সময়টাতেও আর রানের গতি বাড়ানো যায়নি। বরং, প্রথম ২৫ ওভারের মধ্যে ১০৪টি ডট বল খেলেছে পাকিস্তান। তিনশর বেশি রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে এত বেশি ডটে ম্যাচের ফল যেমনটা হওয়ার, শেষ পর্যন্ত তেমনটাই হয়েছে। ৪৭ ওভার ২ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৬০ রানেই থেমে যায় পাকিস্তান।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি পাকিস্তানের। ম্যাচের শুরুতেই ফিল্ডিংয়ে ব্যথা পাওয়ায় দুই দফায় মোট ৩০ ওভার মাঠের বাইরে ছিলেন ফখর জামান। যে কারণে পাকিস্তান ইনিংসের প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যে ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ ছিল না তাঁর। পরিকল্পনার বাইরে সৌদ শাকিলকে ওপেনিংয়ে পাঠালে ৬ রান করে তিনি বিদায় নিলে ৮ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। তিনে নেমে ব্যর্থ মোহাম্মদ রিজওয়ান। অধিনায়ক চাপ বাড়িয়ে ফিরেছেন মাত্র ৩ রান করে।
২২ রানে দুই উইকেট হারানোর পর ফখর জামানকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন বাবর আজম। তবে ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি ফখর। তবে তার বিদায়ের প্রভাব পড়তে দেননি সালমান আলি আগা। তিনি বাবরকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন। কিন্তু ২৮ বলে ৪২ রানে থেমেছেন এই ব্যাটার।
মিডল অর্ডারে ব্যর্থ তৈয়ব তাহির। এক রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। দেখে শুনে খেলা বাবরও ফিরেছেন ফিফটির পর। তিনি ৯০ বলে করেছেন ৬৪ রান। তার বিদায়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় পাকিস্তান। তবে শেষদিকে কিছুটা লড়াই করেছেন খুশদিল শাহ। ৪৯ বলে অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। তবে সেটা কেবলই ব্যবধান কমিয়েছে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে কিউইদের শুরুটা ছিল দেখেশুনে। দলীয় ৩৯ রানে তাদের প্রথম আঘাতটা দেন লেগস্পিনার আবরার আহমেদ। ব্যক্তিগত ১০ রানে তার বলে বোল্ড হয়ে যান ওপেনার ডেভন কনওয়ে। আর এক রান যোগ হতেই আউট হয়েছেন কিউইদের সাবেক অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন।
সম্প্রতি দারুণ ফর্মে থাকা এই অভিজ্ঞ তারকাকে ১ রানে ফিরিয়েছেন পেসার নাসিম শাহ। ড্যারিল মিচেল রান করতে কিছুটা সংগ্রাম করছিলেন। ২৪ বলে ১০ রান করতেই তাকে ফেরান হারিস রউফ। ৭৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যাওয়া নিউজিল্যান্ড পাল্টা লড়াই শুরু করে এরপর। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ল্যাথাম-ইয়াং দেখেশুনে শুরু করে সেটিকে নিয়ে যান ১১৮ রান পর্যন্ত।
এরই মাঝে ইয়াং তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ফরম্যাটটিতে দেশের বাইরে এটি তার প্রথম শতক। নাসিমের দ্বিতীয় শিকার হয়ে আউট হওয়ার আগে ইয়াংয়ের ব্যাটে আসে ১০৭ রান। এরপর রানের গতি বেড়েছে কিউইদের। ক্রিজে এসেই ইনফর্ম ব্যাটার ফিলিপস ব্যাট চালিয়েছেন ঝড়ের তালে। ল্যাথামের সঙ্গে তিনি গড়েন ১২৪ রানের জুটি। দারুণ বোলিং করতে থাকা পাকিস্তান শেষদিকে এমন বিপর্যয় দেখবে হয়তো কল্পনাও করেনি। ফিলিপস বেশি চড়াও ছিলেন শাহিন আফ্রিদির ওপর। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে এই পাক পেসারের ২৯ বলের বিপরীতে ৭৮ রান করেছেন ফিলিপস।
তবে কিউইদের জন্য স্বস্তির বিষয় ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জেতা ল্যাথামের সেঞ্চুরি। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিংয়ের পজিশন বদলেও রানের জন্য ধুঁকতে থাকা এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার কিউইদের বড় লক্ষ্যে ১১৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন। ফিলিপস অপরাজিত ছিলেন ৬১ রানে। বিপরীতে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নেন নাসিম ও রউফ।