খেলার মাঠে সবার আগে
Nsports-logo

বুধবার, ১২ই মার্চ ২০২৫

বাটলার নয়, সাবিনাদের প্রাধান্য দেওয়ার দাবি আমিনুলের

নারী দলের ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের ওপরই আস্থা রাখছে বাফুফে। ফেডারেশন সভাপতি তাবিথ আউয়ালের অনুরোধের পরেও সাবিনা খাতুনরা ‘বাটলারের অধীনে অনুশীলন নয়’ অবস্থানে অনড়। এদিকে, ফেডারেশন বাটলারকে দিয়ে বিকল্প দল গড়ার কাজও শুরু করছে। সরাসরি বাদ না দিয়ে এমন অবস্থা সৃষ্টি করা হচ্ছে যেন সাবিনারাই এক পর্যায়ে স্বেচ্ছায় ক্যাম্প ছেড়ে যান। তখন ফেডারেশন কর্তারা এভাবে বুলি আওড়াতে পারবেন, ‘তারা নিজেরাই চলে গেছে, আমরা তো তাদের যেতে বলিনি।’

১৮ জন নারী ফুটবলার বাফুফে ক্যাম্প ছাড়লে সেটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হবে আখ্যায়িত করে জাতীয় পুরুষ দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক বলেন,

‘তারা (সিনিয়র ফুটবলাররা) যদি চলেই যায় এই ক্ষতি বাংলাদেশের ফুটবলে অপূরণীয়। এটা জাতির দুর্ভাগ্য হয়ে থাকবে এবং দায়ও বাফুফেকে নিতে হবে। বাফুফের অবশ্যই তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ। তারা যেন ফুটবলের সঙ্গেই থাকেন সেটা নিশ্চিত করাও বাফুফের দায়িত্ব।’

পুরুষ ফুটবলে বাংলাদেশ একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০০৩ সালে ঢাকা সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম কারিগর গোলরক্ষক আমিনুল। সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের এই সদস্য সরাসরি সাবিনাদের পাশে দাঁড়ালেন,

‘একটি শিরোপা কত কষ্ট-পরিশ্রমে আসে এটা খেলোয়াড়রা জানে। আর সেখানে এই নারী দলের অনেকেই টানা দুই বার সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। খেলোয়াড়-কোচ সমস্যা নাকি অনেকদিন থেকেই। খেলোয়াড়দের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে অবশ্যই ফেডারেশনের উচিৎ ছিল বিষয়টি মীমাংসা করে এরপর কোচ ঠিক করা।’

জাতীয় দলের অন্যতম সিনিয়র ফুটবলার মাসুরা পারভীন কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে সেটাই বলেছিলেন সাংবাদিকদের,

‘আমরা এতদিন ধরে কোচের কথা বলছি। ফেডারেশন কি একবারও ভাবল না মেয়েরা এত করে বলছে কোচ নেওয়ার আগে অন্তত একবার কথা বলি?’ উদ্ভুত পরিস্থিতির পেছনে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল বাফুফের নারী উইংয়ের দায়–ই বেশি দেখেন। তার দাবি, ‘ফেডারেশনের উচিৎ যাদের দায়িত্বের অবহেলায় এই সংকট তৈরি হয়েছে অতি সত্ত্বর তাদের অপসারণ করা।’

বাংলাদেশ নারী দল দক্ষিণ এশিয়ায় টানা দুইবার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে এখন দৃষ্টি এশিয়ান পর্যায়ে। ঋতুপর্ণা, রুপ্না চাকমারা ফুটবল ছেড়ে দিলে সেটা সহসাই সম্ভব নয় বলে মনে করেন আমিনুল,

‘নারী ফুটবলে এশিয়ান পর্যায়ে অবস্থান করতে হলে দক্ষিণ এশিয়ার সেরাদের দ্বারাই সম্ভব। সেরা গোলরক্ষক ও টুর্নামেন্টসেরা বাংলাদেশের রুপ্না–ঋতুপর্ণা। এদের পক্ষেই সম্ভব এশিয়ান পর্যায়ে কিছু করা। নতুনদের সাফ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা পেতে সময় লাগবে, এরপর না এশিয়ান।’

১৮ নারী ফুটবলারের সঙ্গে বাফুফের স্পষ্ট বিরোধ নেই। তাদের একটাই দাবি, ‘বাটলারের অধীনে অনুশীলন করব না।’ নারী ফুটবলাররা সভাপতির কাছে সমাধান চেয়েছে। নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের ইতিবাচক মনোভাবের প্রেক্ষিতেই বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বাটলারকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছেন। বাটলার-সাবিনাদের দ্বন্দ্ব অনেকটাই ইগোকেন্দ্রিক। ঠিক তেমনি বাফুফের কাছেও এখন বিষয়টি ‘ইগো’র পর্যায়ে। বাটলারকে সরালে বাফুফের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ভুল প্রমাণিত হবে। ফুটবলসংশ্লিষ্টদের ধারণা, ফেডারেশনের অদূরদর্শী ও অপেশাদার সিদ্ধান্তে কয়েকজন ফুটবলারের বিমুখতা তৈরি হচ্ছে।

ফুটবলে কোচই সর্বেসর্বা। দলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে কোচের হাতেই। সাফ চলাকালে অবশ্য সেসব পিটার বাটলারের হাতে ছিল না। খেলোয়াড়দের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও নিয়ন্ত্রণ দু’টোই হারিয়েছিলেন। সনদ ও প্রোফাইলে উচ্চধারী হলেও তার অবস্থান সুদৃঢ় ছিল না বাংলাদেশ নারী দলে। এরপরও কেন বাফুফে বাটলারকেই দুই বছর নবায়ন করল এটা যেমন প্রশ্ন, তেমনি বাটলারের ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মানবোধ নিয়েও খটকা লাগছে ফুটবলসংশ্লিষ্টদের!

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy