শামার জোসেফ: স্বপ্নের টেস্ট অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নিলেন
য়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ উইকেট শিকার করেছেন গায়ানার নিভৃত গ্রাম থেকে উঠে আসা ২৪ বছর বয়সী পেসার।
গ্যালারির কাছাকাছি এসে একটু থেমে দর্শকদের কুর্নিশ করলেন জোসেফ। ধারাভাষ্যকক্ষে ইসা গুহ বললেন, ‘আপনাকেই কুর্নিশ, শামার জোসেফ।’
এমন অভিবাদন আর ভালোবাসা পেতেই পারেন শামার জোসেফ। এমনিতেই দুর্গম ক্যারিবিয়ান গ্রাম থেকে তার উঠে আসার গল্প ছড়িয়ে পড়েছে ক্রিকেট বিশ্বময়। এরপর মাঠের ক্রিকেটেও এমন কীর্তি তিনি গড়লেন, যা পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসের আর কেউ! প্রথম ক্যারিবিয়ান বোলার হিসেবে টেস্ট অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ায় ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেইড টেস্টের প্রথম দিন ব্যাট হাতে ১১ নম্বরে নেমে দারুণ এক ইনিংস খেলার পর বল হাতে দুই উইকেট নেন জোসেফ। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন আরও তিন উইকেট নিয়ে তিনি নাম লেখান ইতিহাসে।
ক্যারিবিয়ান বোলারদের মধ্যে অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ায় সেরা বোলিংয়ের আগের রেকর্ড ছিল মার্লন ব্ল্যাকের। ২০০০ সালে ব্রিজবেনে ৮০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন সাবেক এই ফাস্ট বোলার।
দেশের ভেতরে-বাইরে মিলিয়েই অভিষেকে ৫ উইকেট শিকারি ক্যারিবিয়ান বোলারদের লম্বা খরাও ঘুচল জোসেফকে দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে অভিষেকে ৫ উইকেট শিকারের সবশেষ কীর্তি গড়েছিলেন এখনকার সাদা বলের দলের কোচ ড্যারেন স্যামি। ২০০৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ৬০ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
সব মিলিয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট অভিষেকে ৫ উইকেট শিকারি দশম বোলার জোসেফ।
অভিষেক টেস্ট না হলেও অস্ট্রেলিয়ায় নিজের প্রথম টেস্টে ৫ উইকেট শিকারি ক্যারিবিয়ান বোলার এতদিন ছিলেন একজনই। ১৯৫১ সালে ব্রিজবেনে যে স্বাদ পেয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার আল্ফ ভ্যালেন্টাইন।
সব মিলিয়ে রেকর্ড বইয়ের পাতায় পাতায় এখন জোসেফের নাম।
টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে রেকর্ডের পথে তার চলা শুরু। বিদায় করে দেন তিনি স্টিভেন ম্মিথকে। পরে শর্ট বলে আউট করেন মার্নাস লাবুশেনকে। দ্বিতীয় দিনে অফ স্টাম্প ঘেঁষা বলে তার শিকার ক্যামেরন গ্রিন। শর্ট বলে ফেরান মিচেল স্টার্ককে। পরে ন্যাথান লায়নকে বোল্ড করে পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। ইনিংস শেষে তার নামের পাশে ৯৪ রানে ৫ উইকেট।
তার বেড়ে ওঠা ও টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখার পথে উঠে আসা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে অনেক। গায়ানার রাজধানী জর্জটাউন থেকে অনেক দূরের বিচ্ছিন্ন এক গ্রামে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায় ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথ। গাছগাছড়ায় ভরা সেই নদীপথ পাড়ি দিতে কখনও কখনও দুই দিনও লেগে যায়। গ্রামের জনসংখ্যা সাড়ে তিনশ। ২০১৫ সালের আগে সেখানে কোনো স্থানীয় সরকার ছিল না। টেলিফোন ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে কেবল ২০১৮ সালে। সেই গ্রামেই লেবু আর পেয়ারা দিয়ে বোলিং করতে করতে বেড়ে ওঠা জোসেফের।
সেখান থেকেই উঠে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট খেলছেন তিনি, এটিই অনেকটা রূপকথার মতো। কিন্তু স্রেফ বেড়ে ওঠার গল্ডেই শেষ নয় তার ক্রিকেট জীবনের অধ্যায়, বরং চমকপ্রদ উপাখ্যান লিখলেন তিনি অভিষেকের পারফরম্যান্সেও।