জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রায় ১৩ বছর পর ফিরেই মালয়েশিয়ার বিপক্ষে হেরে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলো বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। তিন বছর আগে হারানো মালয়েশিয়ার বিপক্ষে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিয়ে বুধবার মাঠ ছেড়েছে পিটার বাটলারের দল।
মাস চারেক আগেও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা একের পর এক দলকে হারিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা–মনিকা চাকমারা।
আজ ত্রিদেশীয় নারী ফুটবল সিরিজে সেই বাংলাদেশ নারী দলকেই বড্ড অচেনা লেগেছে।
মালয়েশিয়ার বিপক্ষে আগের তিন ম্যাচে এক জয়, এক হার ও এক ড্র ছিল বাংলাদেশের।
২০২২ সালে ঢাকা সফরে এসে দুই ম্যাচ খেলে একটিতে ড্র আরেকটিতে ৬–০ গোলে হেরেছিল তারা। এবার বদলে গেছে সেই রেকর্ডের খাতাও।
দুর্বল মাঝমাঠ, ধারহীন আক্রমণের প্রদর্শনীর ম্যাচে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ০-১ গোলে হেরেছেন আফঈদা খন্দকাররা।
এই হারে বাংলাদেশের ফুটবলারদের ব্যর্থতার চেয়ে ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের একগুঁয়ে হাই লাইন তত্ত্বই অনেকাংশে দায়ী!
বাংলাদেশের প্রধান কোচ পিটার বাটলার হাই লাইন ডিফেন্স তত্ত্বে বিশ্বাসী।
থাইল্যান্ডে তার এই কৌশলের জন্য বাংলাদেশ দুই ম্যাচে আট গোল হজম করেছিল। ফলে সেই কৌশল নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও নিজের সিদ্ধান্তেই অটল ছিলেন বাটলার।
আজ সেই হাই লাইন ডিফেন্সের কারণেই মালয়েশিয়া একমাত্র জয়সূচক গোলের সুযোগ পেয়েছে।
হাই লাইন তত্ত্ব অনুসারে–
বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা কিক অফ লাইনে অবস্থান করেন। ফলে প্রতিপক্ষ খুব সহজেই ডিফেন্ডারদের মাথার ওপর দিয়ে কিংবা জোরালো থ্রু বল দিয়ে রক্ষণ ভেদ করতে পারে।
এরকম এক আক্রমণে প্রথমার্ধে মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড নুর আনিশা গোল করেছেন।
গোলরক্ষক রুপ্না চাকমা পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও বলের লাগাল পাননি। দারুণ দক্ষতায় নুর আনিশা বাংলাদেশের জালে বল পাঠান।
মালয়েশিয়া দ্বিতীয়ার্ধে আরও কয়েকটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাটলারের ভুল কৌশলের জন্য।
কয়েকবারই বাংলাদেশের ডিফেন্স মালয়েশিয়ার ফরোয়ার্ডের কাছে পরাস্ত হয়েছে। গোলরক্ষক রুপ্না চাকমা বিশেষ দক্ষতায় প্রতিবারই সেভ করেছেন।
বিশেষ করে ইনজুরি সময়ে মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড রুপ্নাকে একা পেয়েও বল জালে পাঠাতে পারেননি। মালয়েশিয়ার ফরোয়ার্ডদের মান ও গতি কোরিয়া, চীন ও থাইল্যান্ডের মতো নয়।
ভালো মানের দলের বিপক্ষেও বাটলার এই হাই লাইন তত্ত্ব বজায় রাখলে বড় হারই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।
এশিয়া কাপ নিশ্চিত করা দলের অধিনায়ক ঋতুপর্ণা কয়েকবার একক প্রচেষ্টায় দূর পাল্লার শট কিংবা বল নিয়ে বক্সে প্রবেশের চেষ্টা করলেও সেগুলো গোলের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার বক্সে বিপদজনকভাবে কয়েকবার প্রবেশ করলেও সেগুলো গোলে রূপান্তর করতে পারেননি।
বাংলাদেশ ম্যাচের সবচেয়ে সুন্দর ও সহজ গোলের সুযোগ পেয়েছিল ৬৮ মিনিটে।
ঋতুপর্ণা চাকমার বাঁ প্রান্ত থেকে ক্রসে বক্সে আনমার্কড সাগরিকা বল পেয়েছিলেন। তার নেওয়া হেড পোস্টের একটু পাশ দিয়ে যায়।
ওই আক্রমণ ছাড়া বাংলাদেশ আর তেমন নিশ্চিত গোলের সুযোগ করতে পারেনি।
বাটলার পাঁচ ফুটবলারই পরিবর্তন করেছেন। স্বপ্না, তহুরা, সাগরিকা, উমহেলা মারমা, জয়নবকে নামালেও খেলার ধারায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ঋতুপর্ণা খানিকটা আঘাত পাওয়ায় ৮০ মিনিটের আগে তাকেও তুলে নেওয়া হয়।
আজ স্টেডিয়ামে হাজার পাঁচেক দর্শক উপস্থিত ছিল।
বাংলাদেশ-ভারত পুুরুষ ফুটবল ম্যাচের মতো উন্মাদনা না থাকায় স্টেডিয়াম এলাকার নিরাপত্তা ততটা জোরদার ছিল না। এরপরও আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী স্টেডিয়ামের দোকানপাট বন্ধ ছিল।
২০২৬ এর মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় এশিয়ান কাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ।
২৯ নভেম্বর, শনিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আজারবাইজানের প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়া। ২ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার বাংলাদেশ খেলবে আজারবাইজানের বিপক্ষে।


