১৯২১ সালের পর এই প্রথম! বার্সার কাছে ফের হালিতেই হার রিয়ালের
বার্সেলোনা ৪:৩ রিয়াল মাদ্রিদ
ঘরের মাঠে রিয়ালকে ফের হালিতেই (৪-৩ গোলে) হারিয়ে লা লিগায় ৭ পয়েন্টের লিড নিশ্চিত করেছে হান্সি ফ্লিকের দল। রিয়াল পরের ম্যাচে পয়েন্ট হারালে কিংবা বার্সেলোনা তাদের পরের ম্যাচ জিতলেই শিরোপা উৎসব করতে পারবেন ইয়ামাল-রাফিনিয়ারা।
বার্সেলোনা–রিয়াল মাদ্রিদের মৌসুম বাঁচানো এল ক্লাসিকোতে শুরুর ১৪ মিনিটের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ায় একতরফা ম্যাচের আভাস মিলল। কিলিয়ান এমবাপ্পের জোড়া গোলে রিয়াল তখন এগিয়ে ২–০ গোলে।
কিন্তু এরপরই বদলে যেতে থাকে ম্যাচের দৃশ্যপট।
কিন্তু পিছিয়ে পড়ার পর যেন ঘুম ভাঙল বার্সেলোনার! খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিরতির আগেই চারবার জাল কাঁপিয়ে চালকের আসনে বসে পড়ল তারা।
১৯ মিনিটে এরিক গার্সিয়ার গোলে ব্যবধান কমানোর পর ২ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে বার্সাকে ৩–২ গোলে এগিয়ে দেন লামিনে ইয়ামাল ও রাফিনিয়া।
রাফিনিয়া যখন ম্যাচের পঞ্চম গোলটি করেন তখন ম্যাচের ৩৪ মিনিটের খেলা চলছিল। এই গোলের মধ্য দিয়ে নতুন এক ইতিহাসও দেখল এল ক্লাসিকো।
১০৩ বছর পর এই প্রথম এল ক্লাসিকোতে প্রথম ৩৫ মিনিটের মধ্যে ৫ গোলের দেখা মিলল।
এর আগে ১৯২২ সালের ২১ মার্চ এল ক্লাসিকোতে সর্বশেষ এমন কিছুর দেখা মিলেছিল। এরপর অবশ্য বিরতির আগে রাফিনিয়ার কল্যাণে হয়ে যায় ম্যাচের ৬ষ্ঠ গোলটিও।
১০৩ বছরের মধ্যে এই প্রথম এল ক্লাসিকোয় কোনো দল প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায়।
বিরতির পর হ্যাটট্রিক পূরণ করে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরানোর ইঙ্গিত দেন এমবাপ্পে। যদিও শেষ পর্যন্ত ট্র্যাজিক হিরো হয়েই থেকে যান এই ফরোয়ার্ড।
হ্যাটট্রিক করেও মাঠ ছাড়তে হয় হারের হতাশা নিয়ে। ৪–৩ গোলের এই হারে লিগও একরকম রিয়ালের হাত ফসকে গেল। এখন পরের তিন ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট পেলেই নিশ্চিত হবে বার্সার লিগ শিরোপা।
অর্থাৎ পরের ম্যাচে এস্পানিওলকে হারালেই লিগ জিতে নেবেন ইয়ামাল–রাফিনিয়ারা।
আজ রোববার অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই জোড়া ভুলে রিয়ালকে পেনাল্টি উপহার দেয় বার্সা। রিয়ালের আক্রমণের মুখে প্রথমে ভুল করেন বার্সা ডিফেন্ডার পাউ কুবারসি।
এরপর বক্সের ভেতর এমবাপ্পেকে ফাউল করে রিয়ালকে পেনাল্টিই উপহার দিয়ে বসেন বার্সা গোলরক্ষক ভয়চেক সেজনি। পেনাল্টিতে ভুল করেননি এমবাপ্পে। গোল করে এগিয়ে দেন রিয়ালকে।
পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠে বার্সা। দ্রুত কয়েকবার আক্রমণেও যায় তারা, তবে কাঙ্ক্ষিত গোলটি মেলেনি।
বার্সা না পারলেও ক্ল্যাসিকাল এক প্রতি–আক্রমণ থেকে দ্বিতীয় গোল আদায় করতে ভুল করেননি এমবাপ্পে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের পাস ধরে দারুণ ফিনিশিংয়ে রিয়ালকে দ্বিতীয় গোলটি এনে দেন এই ফরাসি তারকা।
গোল নিয়ে অবশ্য আপত্তি জানায় বার্সা। আক্রমণের শুরুতে ইয়ামালের বিরুদ্ধে ফাউলের অভিযোগ আনে তারা। যদিও সে অভিযোগ শেষ পর্যন্ত টেকেনি।
গোল পেয় যায় কার্লো আনচেলত্তির দল।
জোড়া গোল খেয়ে যেন ঘুম ভাঙে বার্সার। আক্রমণের পর আক্রমণে কাঁপিয়ে দেয় রিয়াল–রক্ষণ । থিবো কোর্তায়ার দৃঢ়তায় একাধিকবার বেঁচে যাওয়ার পরও অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি।
১৯ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে হেডে গোল করে বার্সার হয়ে ব্যবধান কমান এরিক গার্সিয়া। ব্যবধান ২–১ করার পর আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে বার্সা।
মাঝমাঠের দখল রেখে বেশ কিছুও আক্রমণ শানায় তারা। তেমনই এক আক্রমণ থেকে ৩২ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরায় বার্সা। বক্সের ভেতর থেকে বাঁকানো ট্রেডমার্ক শটে গোল করেন ইয়ামাল।
এই গোলের রেশ কাটার আগেই অলিম্পিক স্টেডিয়ামকে উল্লাসে মাতিয়ে ২ মিনিট পর ব্যবধান ৩–২ করেন রাফিনিয়া।
এরপর সমতা ফেরানোর জন্য রিয়াল পেনাল্টি পেলেও সেই পেনাল্টি বাতিল হয়ে যায় ভিএআরের হস্তক্ষেপে।
রিয়াল সমতা ফেরাতে না পারলেও বার্সা ঠিকই পেয়ে যায় নিজেদের চতুর্থ গোল। ৪৫ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন রাফিনিয়া।
বিরতির পর গোল করেছিলেন ইয়ামালও। কিন্তু তাঁর গোলও বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। এ সময় একাধিক খেলোয়াড় বদলে এবং কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন এনে ম্যাচের গতিও বদলে দেন রিয়াল কোচ আনচেলত্তি।
আর এই অদল–বদলের ফল আসে ম্যাচের ৭০ মিনিটে। দারুণ এক আক্রমণে ভিনিসিয়ুসের পাস থেকে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন এমবাপ্পে।
এরপর হ্যাটট্রিক করে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল রাফিনিয়ার সামনেও। কিন্তু সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেননি রাফিনিয়া। শেষ দিকে একাধিকবার কাছাকাছি গিয়েও শেষ পর্যন্ত আর সমতা ফেরাতে পারেনি রিয়াল।
শেষ বাঁশি বাজার আগে গোল করেছিলেন ফেরমিন লোপেজও। কিন্তু সেই গোল বাতিল হয় হ্যান্ডবলের কারণে। যদিও তাতে বার্সার কোনো ক্ষতি হয়নি।