১৫৬.৭ কিলোমিটার গতির ঝড় তুলে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন মায়াঙ্ক
আইপিএল অভিষেকেই ১৫৫ কিলোমিটার গতি ছাড়িয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মায়াঙ্ক ইয়াদাভ। পরের ম্যাচে নিজেকে আরও ছাড়িয়ে গেলেন লাক্ষৌ সুপার জায়ান্টসের এই ফাস্ট বোলার। এবার তার বলের গতি ছুঁতে চাইল ১৫৭ কিলোমিটার! দেড়শ কিলোমিটার ছাড়ানো গোলা ছুড়লেন তো নিয়মিতই। তবে ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও দুঃসংবাদ। আইপিএলে গতির ঝড় তুলে আলোড়ন ফেলে দেওয়া তরুণ ফাস্ট বোলার জানিয়ে রাখলেন আরও দারুণ কিছুর প্রত্যয়।
গত শনিবার পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আইপিএল অভিষেক মায়াঙ্কের। আইপিএলে তার প্রথম ডেলিভারি ছিল ১৪৭ কিলোমিটার গতির। তৃতীয় ডেলিভারিতে তিনি স্পর্শ করেন ১৫০। পরের ওভারে একটি ডেলিভারির গতি ছিল ১৫৫.৮ কিলোমিটার!
সেই গতির রথ তিনি আরও তীব্রগতিতে ছুটিয়ে দেন মঙ্গলবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে। এ দিন তার একটি ডেলিভারির গতি স্পিডগানে ফুটে ওঠে ১৫৭ কিলোমিটারের বেশি। তবে সেটিতে টেকনিক্যাল ত্রুটি ছিল। কিন্তু ১৫৬.৭ কিলোমিটার গতির আরেকটি ডেলিভারিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। একদম নিখাদ ও সহজাত! আইপিএল ইতিহাসের চতুর্থ দ্রুততম ডেলিভারি সেটি।
গতি দিয়ে নজর কাড়লেও সেটিই তার শেষ কথা নয়। কার্যকারিতাও তার দারুণ। গতিময় ফাস্ট বোলাররা অনেক সময়ই একটু এলোমেলো থাকেন, বিশেষ করে এমন তরুণ ও অনভিজ্ঞ সময়টায়। কিন্তু মায়াঙ্ক সেখানে দারুণ গোছানো।
তার বোলিং অ্যাকশন চমৎকার ছন্দময় ও মসৃণ। দুই ম্যাচেই ১৫০ কিলোমিটার গতি ছাড়িয়েছেন নিয়মিত। পাশাপাশি সিম মুভমেন্টও আদায় করে নিতে পেরেছেন। গতি ও বাউন্সকে কাজে লাগানোর মতো দারুণ পরিণত মনে হয়েছে তাকে এখনই। ব্যাটসম্যানকে পড়তে পারার দক্ষতা ফুটে উঠেছে দুই ম্যাচেই।
প্রথম ম্যাচে ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি হয়েছিলেন ম্যান অব দা ম্যাচ। পরেরটিতেও তিনিই সেরা, এবার ১৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে।
এই ম্যাচে তার গতি, নিয়ন্ত্রণ ও সিম মুভমেন্টের সামনে ব্যাটসম্যানদের অসহায় মনে হচ্ছিল। এমনকি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ক্যামেরন গ্রিনের মতো ব্যাটসম্যান, যারা গতিময় ও বাউন্সি উইকেটে ওই মানের বোলারদের খেলে থাকেন সবসময়, এই দুজনকেই বাউন্স ও গতিতে ভুগিয়ে আউট করেন মায়াঙ্ক। গ্রিনের আউটে তো বল এত গতিময় ছিল যে, স্টাম্পে ছোবল দেওয়ার পর স্রেফ এক বাউন্সেই পেছন দিয়ে সীমানা পেরিয়ে যায়।
বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ম্যাচ সেরা হওয়ার পর ২১ বছর বয়সী এই ফাস্ট বোলার বললেন, তার দৃষ্টি আরও বড় লক্ষ্যে।
“দুই ম্যাচে দুটি ম্যান অব দা ম্যাচ পেয়ে ভালো লাগছে। তবে আমি বেশি খুশি দুটি ম্যাচেই দল জেতায়। আমার মূল লক্ষ্য দেশের হয়ে খেলা, যত বেশি বছর সম্ভব। এটা তো সবে শুরু, আমার মনোযোগ মূল লক্ষ্যেই।”
বয়স ও অভিজ্ঞতা কম থাকলেও ফাস্ট বোলারদের শৃঙ্খলা ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ব্যাপারগুলো তার জানা আছে ভালোভাবেই। তার বোলিং যেমন পরিণত, তেমনি তার বোধও।
“এই গতিতে বল করতে অনেক কিছুই থাকতে হয়, যেমন (সঠিক) খাবার, ঘুম ও অনুশীলন। এত জোরে বোলিং করতে হলে সবকিছুতেই নিখুঁত থাকতে হবে। খাবারসহ এসব কিছুতে যেমন আমার লক্ষ্য থাকে, তেমনি রিকভারিও গুরুত্বপূর্ণ, আইস বাথ নেওয়া ও এরকম যা কিছু।”
আইপিএলে তার এবারই অভিষেক হলেও লাক্ষ্নৌ সুপার জায়ান্টস তাকে দলে নেয় ২০২২ আসরের আগে। গতির কারণেই তার ওপর চোখ পড়েছিল দলটির সেই সময়ের মেন্টর গৌতাম গাম্ভিরের। সাবেক এই ভারতীয় ব্যাটসম্যানের চাওয়াতেই মূলত নিলামে ভিত্তিমূল্য ২০ লাখ রুপিতে তাকে দলে নেয় লাক্ষ্নৌ। তবে ম্যাচ খেলার সুযোগ মেলেনি। গত আসরের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে চোট পেয়ে ছিটকে যান গোটা আসর থেকে।
তার পরও তাকে ধরে রাখে লাক্ষ্নৌ। সেটির সুফলই মিলছে এবার।
চলতি আইপিএলের সবচেয়ে বড় চমক তিনি, সবচেয়ে বেশি আলোচনাও এখন তাকে ঘিরে। নিজ দলে তো বটেই, প্রতিপক্ষ দলের অনেকেও প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাকে। বিশ্বজুড়ে সাবেক ক্রিকেটার, কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা সামাজিক মাধ্যমে স্তুতিতে ভাসাচ্ছেন তাকে।
লাক্ষ্নৌর অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের কথায় ফুটে উঠল মায়াঙ্কের ত্যাগ, পরিশ্রম ও সম্ভাবনার দিকগুলো।
“এই দুটি ম্যাচে মায়াঙ্ককে এভাবে বোলিং করতে দেখে খুবই ভালো লাগছে। গত দুই মৌসুমে খুবই ধৈর্য নিয়ে শান্ত হয়ে ডাগআউটে অপেক্ষা করেছে সে। গত মৌসুমে দুর্ভাগ্যজনকভাবে চোটে পড়েছিল। তবে মুম্বাইয়ে ফিজিওর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিল, কঠোর পরিশ্রম করেছে।”
“সে বোঝে যে ১৫৫ কিলোমিটার গতিতে নিয়মিত বোলিং করা সহজ কাজ নয়। এই বয়সেই বেশ কবার চোটে পড়েছে সে। তবে তার টেম্পারামেন্ট দারুণ। স্টাম্পের ২০ গজ পেছনে দাঁড়িয়ে (কিপিংয়ে) আমি তার বোলিং উপভোগ করছি দারুণভাবে। তার বোলিংয়ের সময় সেখানে থাকতে পারাটাই ভালো!”
লাক্ষ্নৌর দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার কুইন্টন ডি কক এই ফাস্ট বোলারের নাম দিয়েছেন ‘বোলিং রকেট।’ মঙ্গলবারের ম্যাচের পর বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক ও সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসি তুলে ধরলেন, গতির চেয়েও মায়াঙ্কের লাইন-লেংথ ও শৃঙ্খলায় বেশি মুগ্ধ তিনি।
সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের পরিচিত কোচ টম মুডি ইএসপিএনক্রিকইনফোর একটি শো-তে বললেন, আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়ার আলোচনায় থাকবেন মায়াঙ্ক। একই শো-তে নিউ জিল্যান্ডের সাবেক বাঁহাতি পেসার মিচেন ম্যাকক্লেনাগান ও সাবেক ভারতীয় পেসার ভারুন আরুনও বললেন, ভারতের বিশ্বকাপ দলের বিবেচনায় থাকবেন নতুন এই সেনসেশন।