ক্রিকেট পাড়ার কর্মকান্ডে বিরক্ত সুজন, প্রশ্নবিদ্ধ করলেন বিসিবিকে
টিকিট নিয়ে চরম অব্যবস্থাপনা, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নিয়ে অবহেলা, সিনিয়র ক্রিকেটারদের একের পর এক দৃষ্টিকটু অপেশাদার আচরণ -সব মিলিয়ে বিপিএল ইস্যুতে বিসবি কে এক হাত নিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক এবং ঢাকা ক্যাপিটালস এর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন।
শুরু থেকেই পরিবর্তনের ডাক থাকলেও আসলে পরিবর্তন টা কোথায়? সবার মনে প্রশ্ন বিপিএলে আসলে কী চলছে? পেমেন্ট ইস্যু আর ম্যাচ না খেলার শঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে মাঠে ফিরেছে দুর্বার রাজশাহী। কিন্তু এখনও দলের দেশি ক্রিকেটাররা প্রতিশ্রুতি করা অর্থ যে পেয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট দরবারে দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েই চলেছে।
নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে ব্যর্থ বিসিবি। ব্যর্থ টিকিট ব্যবস্থাপনতেও। সব মিলিয়ে তাই ফারুক আহমেদের বোর্ডের কার্যকলাপে যারপরনাই বিরক্ত বিসিবির সাবেক পরিচালক সুজন। বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ বলেন,
‘যা হচ্ছে ভালো কিছু হচ্ছে না এবং আমরা খুব একতা গুছিয়ে বিপিএল আয়োজনে ব্যর্থ। টিকিট নিয়ে সংকট, মানুষের চ্যাঁচামেচি; বাংলাএশের মানুষ কয়জন অনলাইন থেকে টিকিট কিনতে পারে? রিকশাওয়ালা কি অনলাইনে টিকিট কাটতে পারবে, সে খেলা দেখবে না? আমাদের কথা হচ্ছে, আমরা তো এখনও ওই স্ট্যান্ডার্ডে এখনও পৌঁছাইনি। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে। কালোবাজারি বন্ধ করতে গিয়ে এটা করবেন তো সেই কালোবাজারি বন্ধ করতে পারলেন?’
তিনি আরও বলেন,
‘বিপিএলে ছয় ম্যাচ হওয়ার পর একটা দলের থেকে বলছে তারা (খেলোয়াড়) আর খেলবে না। কারণ তারা প্রাপ্য টাকা পায়নি। এটা তো আমাদের জন্য আসলেই লজ্জাজনক। ব্যাংক গ্যারান্টি কোথায়? বিসিবি কেন ব্যাংক গ্যারান্টি ভাঙিয়ে টাকা দিয়ে দিচ্ছে না? আমার কথা হচ্ছে বিসিবির বিপিএল গভর্নমেন্ট বডির কাজটা কী তাহলে? একটা টিম করতে মিনিমাম ৮ কোটি টাকা লাগবে। আমার কাছে ৮ কোটি টাকা না থাকলে আমি বিপিএলের টিম কিনব কেন? আমি তো মানুষের আশায় কিনিনি যে, মানুষ আমাকে স্পন্সর দেবে। আপনি তো স্পন্সর পেতেও পারেন, না-ও পেতে পারেন।’
সুজনের বিরক্তি আছে নিজ দল ঢাকা ক্যাপিটালসকে নিয়েও। লিটন, মোস্তাফিজ, মোসাদ্দেক, তানজিদদের মতো তারকায় ঠাঁসা দল অথচ ৮ ম্যাচে মাত্র ১ জয়। যার উত্তর নিজেও খুঁজছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সফল এই কোচ,
‘এটা স্কুল ক্রিকেট না যে কাউকে বকা দিয়ে শেখানো যাবে। এমন না যে ট্রেনিং কম হয়েছে, সেটাও না। আমি বুঝতে পারছি না আসলে কেন এমন হচ্ছে। ডিপ্রেসড আসলে। আমাদের ফরেন প্লেয়ারের কোয়ালিটি মানসম্মত নয়, না ফাস্ট বোলার না স্পিনার। মোমেন্টামটা ছুটল আর ওইখান থেকে আমরা কামব্যাক করতে পারছি না। প্রতিদিন হারছেন, এখান থেকে মোটিভেট করা যে কতটা কঠিন, আমি জানি আসলে।’
কথা বললেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে লিটনের বাদ পড়া ইস্যুতেও। প্রশ্ন তুলেছেন লিটনকে ফর্মে ফেরাতে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের আদৌ কোনো পরিকল্পনা ছিল কি? -সুজনের ভাষায়,
‘আমি বলছি না আমাদের ইয়ংস্টাররা ভালো ক্রিকেট খেলে না কেউ, তবে আপনি লিটনের সঙ্গে কম্পেয়ার করার মতো কাউকে পাবেন না। ওর যে এক্সপেরিয়েন্স আছে সেটার তুলনা তো হবে না। আমরা যারা এতো বছর ধরে বিসিবিতে লিটনকে পেয়েছি, লিটন যে একদম আউট অব ফর্ম ছিল, এটা নিয়ে আমরা আসলে কী করেছি? আমরা কোচরা বা টিম থেকে কী করা হয়েছে? তার সঙ্গে ইন্ডিভিজুয়ালি কথা বলা হয়েছে কি-না, কেন সে রান করতে পারছে না, তার টেকনিকে সমস্যা হচ্ছে কি-না, এসব নিয়ে কী কিছু করা হয়েছে?’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ঠিক আগে জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচের পদ থেকে নিক পোথাসের আকস্মিক পদত্যাগের সিদ্ধান্তেও বিস্মিত সুজন। শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পেস ইউনিটের অফফর্ম নিয়েও। সমস্যা সমাধানে দ্রুত বিসিবিকে দায়িত্বশীল হওয়ার তাগাদা দিয়ে বললেন, ‘নিশ্চয়ই একটা নোটিশ পিরিয়ড থাকে। এই নোটিশ পিরিয়ড না দিয়েই সে কীভাবে চলে যায়, এটা নিয়ে বিসিবি আমার মতে একটা অ্যাকশন নিতেই পারে।’