বিপিএলে শনিবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৫৩ রানে হারাল রংপুর রাইডার্স। তিন বিপিএল অভিষিক্ত সবাই ছাপ রাখেন নিজেদের মতো। দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ প্রথম খেলতে নেমে রিজা হেনড্রিকস খেলেন ৪১ বলে ৫৮ রানের ইনিংস। শেষ দিকে ২৬ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন জিমি নিশাম। ২০ ওভারে রংপুর তোলে ২১১ রান।
সেই রান তাড়ায় চট্টগ্রাম কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি সেভাবে। ২০ ওভারে তারা তোলে ১৫৮ রান।
৪৫ ছুঁইছুঁই বয়সে বিপিএল অভিষেকে প্রথম বলেই উইকেটের স্বাদ পান দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ স্পিনার ইমরান তাহির।
ঝড়ো ফিফটির পর বল হাতে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা বিপিএলে প্রথমবার খেলতে নামা নিশাম।
১৬ বলে ২৭ রানের ইনিংসের পর সাকিব আল হাসানের শিকার ২ উইকেট। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ৭ হাজার রান পূরণ করেন এই ইনিংসের পথেই। বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে ৭ হাজার রান ও ৪০০ উইকেটের ‘ডাবল’ কীর্তিও গড়া হয়ে যায় তার।
টসজয়ী রংপুরের দাপটের শুরু ম্যাচের শুরু থেকেই। ব্যাটিং ঝড়ের সূচনা হয় রনি তালুকদারের ব্যাটে। আল আমিন হোসেনকে বাউন্ডারি দিয়ে শুরুর পর বিলাল খানকে ছক্কা ও চার মারেন তিনি দুটি শর্ট বল পেয়ে। পরের ওভারে শহিদুল ইসলামের শর্ট বল উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করার পর ড্রাইভে চার মারেন হেনড্রিকস।
তাদের দুই জনের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ৫২ রান তোলে রংপুর।
৪১ বলে ৬১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে রনির বিদায়ে। ১৭ বলে ২৪ রান করা ওপেনারকে ফেরান নিহাদউজ্জামান।
রংপুরের রানের গতি প্রবাহ তাতে কমেনি। বরং সাকিব যাওয়ার পর আরও বাড়ে গতি। সৈকত আলির ওভারে দুটি বাউনডান্ডিার পর নিহাদকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
১০ ওভারে রংপুর পৌঁছে যায় ৯৯ রানে।
শহিদুলকে চার মেরে হেনড্রিকসের ফিফটি আসে ৩৬ বলে। ওই ওভারেই স্লোয়ার ডেলিভারি এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে তিনি উদযাপন করেন মাইলফলক।
পরের ওভারেই জোড়া ধাক্কায় রংপুরকে একটু নাড়িয়ে দেন সালাউদ্দিন সাকিল। এবারের আসরে প্রথম খেলতে নামা পেসার তিন বলের মধ্যে বিদায় করেন সাকিব ও হেনড্রিকসকে।
রানের গতিতেও একটু ভাটার টান আসে ওই সময়। ১০ ওভারের পরের ৫ ওভারে আসে ৩৭ রান।
পরের ৫ ওভারে তা পুষিয়ে দেন সোহান ও নিশাম। দুজনই অবশ্য জীবন পান। ফুল লেংথ ডাইভ দিয়ে অল্পের জন্য সোহানের ক্যাচ নিতে পারেননি সাকিল। রংপুর অধিনায়কের রান ছিল তখন ১। আল আমিনের বলে নিশাম ৯ রানে বেঁচে যান জশ ব্রাউন স্কয়ার লেগে ক্যাচ নিতে না পারায়।
ব্রাউনের হাত ফসকে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। আল আমিনের পরের দুই বলে আরও দুটি বাউন্ডারি আসে নিশামের ব্যাটে। শেষ ওভারে তার ব্যাটিং দাপটেই বিলাল হজম করেন ২০ রান। মাঝে আল আমিনের এক ওভারে ছক্কা আসে নিশাম-সোহান দুজনের ব্যাট থেকেই।
চতুর্থ উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৪৬ বলে আসে ৮৯ রান। শেষ ৫ ওভারে রংপুর তোলে ৭৫ রান।
চট্টগ্রামের সেরা বোলার বিলাল খানের ৪ ওভার থেকে এ দিন আসে ৫১ রান। এবারের আসরে এই প্রথম কোনো বোলার রান দেওয়ার ফিফটি করলেন।
বিশাল রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল উড়ন্ত শুরু। কিন্তু চট্টগ্রামের শুরুটা হয় উল্টো। জশ ব্রাউন শুরু করেছিলেন প্রথম ওভারে আশিকুর জামানকে ছক্কা মেরে। তবে তৃতীয় ওভারেই দারুণ এক আর্ম ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে দেন সাকিব।
আরেক ওপেনার সৈকত আলির ব্যাট ছিল বিস্ময়কর রকমের ঝিমিয়ে। পাওয়ার প্লে শেষে তার রান ছিল ১৭ বলে ৯।
অবিশ্বাস্যভাবে, প্রথম ১১ ওভারে কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেননি ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার! তখন তার রান ২৯ বলে ১৭।
পরের সময়টায় অবশ্য ৬টি ছক্কা এসেছে তার ব্যাট থেকে। কিন্তু ততক্ষণে তার দলের সম্ভাবনা আর জিইয়ে নেই। তার ৪৫ বলে ৬৩ রানের ইনিংসটিও তাই কার্যত মূল্যহীন।
তিনে নামা টম ব্রুসকে ফিরিয়ে বিপিএল অভিষেকে প্রথম বলে উইকেটের স্বাদ পান ইমরান তাহির। এই প্রাণশক্তির কমতি নেই এই লেগ স্পিনারের। মাঠজুড়ে দৌড়ে তার সেই চেনা উদযাপন মেলে ধরেন এখানেও। এমনকি শেষ দিকে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর ‘Siuuuuu’ উদযাপনেও দেখা যায় তাকে।
শাহাদাত হোসেন চারে নেমে সৈকতকে অনুসরণ করেই যেন ১৩ বলে করেন ৯ রান। তিন ম্যাচ পর একাদশে ফেরা কার্টিস ক্যাম্পার শুরুকে সাকিবকে ছক্কা মারলেও শেষ পর্যন্ত ২৪ রান করতে খেলেন ২১ বল।
শেষ দিকে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৩ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে ব্যবধান কিছুটা কমান শুভাগত হোম। তার পরও রংপুরে জয় বিশাল ব্যবধানে।
৮ ম্যাচে ৬ জয় নিয়ে রংপুর থাকল শীর্ষেই। সমান ম্যাচে তৃতীয় পরাজয়ে চট্টগ্রাম আপাতত তিনে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স : ২০ ওভারে ২১১/৩ (রনি ২৪, হেনড্রিকস ৫৮, সাকিব ২৭, সোহান ৩১*, নিশাম ৫১*; বিলাল ৪-০-৫১-০, আল আমিন ৪-০-৪০-০, শহিদুল ৪-০-৪২-০, সাকিল ২-০-১৫-২, নিহাদ ৩-০-২৭-১, সৈকত ১-০-১৫-০, শুভাগত ১-০-১০-০, ক্যাম্পার ১-০-৬-০)।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৫৮/৬ (ব্রাউন ১০, সৈকত ৬৩, ব্রুস ১৪, শাহাদাত ১২, ক্যাম্পার ২৪, শুভাগত ৩১*, শহিদুল ১, নিহাদ ২*; আশিকুর ২-০-২২-০, মেহেদি ৩-০-৩৩-০, সাকিব ৪-০-২৪-২, হাসান ৩-০-১৮-০, নিশাম ৪-০-৩২-২, তাহির ৪-০-২৮-১)।
ফল: রংপুর রাইডার্স ৫৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: জিমি নিশাম।